করোনাকালে খুলনায় ৩১৭৮ স্কুলছাত্রীর বিয়ে

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন
প্রতীকী ছবি

খুলনায় করোনাকালে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী করোনাকালে জেলায় তিন হাজার ১৭৮ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫২২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ১৭৮ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে কচুয়া উপজেলায় সর্বোচ্চ ৫১৬ স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। পাশাপাশি সদরে ৪৯৭, চিতলমারীতে ৪০৭, ফকিরহাটে ৩৯১, মোল্লাহাটে ৩৪৪, মোরেলগঞ্জে ৩৫৫, রামপালে ২৩৭, মোংলায় ২১৮ এবং শরণখোলায় ২১৩ বাল্যবিয়ে হয়েছে।

এর বাইরে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে। ঝরে পড়া, বিদ্যালয়ে না আসা হতদরিদ্র পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীদের বিয়ে হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কি পরিমাণ বাল্যবিয়ে হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই কোনও দফতরে।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর করোনাকালীন কতটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছে ১০ দিন সময় নিয়েও সেই তথ্য দিতে পারেননি সংস্থার উপ-পরিচালক মনোয়ারা খানম। বারবার তথ্য দেওয়ার কথা বলেও দেননি। এরপর থেকে কল দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন।

জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জেলায় পাঁচ হাজার ৭৩৯ বিয়ে হয়েছে। এই সময়ে দুই হাজার ৭৯৯ তালাক হয়েছে। রেজিস্ট্রারদের মাধ্যমে হওয়া সব বিয়েতে সরকারি বয়সসীমা মানা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার।

মাত্র দেড় বছরে জেলায় এত সংখ্যক বাল্যবিয়ে হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অভিভাবকদের অসচেতনতাকে দায়ী করেছে সচেতন মহল।

সচেতন মহলের অভিযোগ, বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদফতর ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে। এর সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, নারী সংগঠন, জেলা মহিলা সংস্থা, মহিলা পরিষদসহ নানা সংগঠন রয়েছে। এক জেলায় এতগুলো বাল্যবিয়ে হলো অথচ তারা খবরই রাখলো না।

জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী আইনজীবী শরিফা খানম বলেন, করোনাকালীন সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সুযোগে মুঠোফোনে অতিরিক্ত আসক্তি, সচেতনতার অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এটি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও নারী নেত্রী তানিয়া খাতুন বলেন, করোনাকালীন দরিদ্র ও বস্তিবাসীর মধ্যে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য সচেতনতামূলক কোনও কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। এটি বাল্যবিয়ে বাড়ার একটি কারণ। নিম্নআয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীকে সচেতন করতে পারলে বাল্যবিয়ে কমবে।

সচেতন নাগরিকরা জানিয়েছেন, বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য আইন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের অভিভাবক ও কিশোরীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করতে হবে। বাল্যবিয়ের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতাসহ শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে করোনাকালীন সময়ে বাল্যবিয়ের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, ৫২২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ১৭৮ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। ভবিষ্যতে বাল্যবিয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি।

জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, যারা রেজিস্ট্রার কাজি; তারা বিয়ে পড়ানোর আগে বয়স প্রমাণের বৈধ কাগজপত্র দেখে বিয়ে পড়ান। রেজিস্ট্রার কাজিদের বাল্যবিয়ে পড়ানোর সুযোগ নেই। এরপরও যদি কোনও কাজি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বাল্যবিয়ে নিবন্ধন করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বাল্যবিয়ের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। যেখানেই বাল্যবিয়ের খবর পাবেন সেখানে গিয়ে বন্ধ করবেন নির্বাহী কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার ও স্থানীয় ইমামদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদি কোনও নিকাহ রেজিস্ট্রার বাল্যবিয়ে পড়ান তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সূত্র বাংলা ট্রিবিউন)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!