সাতক্ষীরার দেবহাটায় জমি দখলের ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতায় সংঘাতের আশঙ্কা

রেজাউর রহমান রিজভী
রেজাউর রহমান রিজভী
5 মিনিটে পড়ুন
ছবি সৌজন্যে: বার্তা বাজার

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালী পারুলিয়া মৌজার নামীয় মালিকানা রেকর্ডীয় সম্পত্তি দখলের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগীরা। গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর দেবহাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দখল হওয়া জমি ফেরত পাওয়ার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সখিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নজরুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, খলিশাখালীতে রেকর্ডীয় মালিকানা ৪৩৯.২০ একর জমি স্থানীয় ভুমিহীন নামধারী সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু কর্তৃক, অবৈধভাবে জবর দখল করে নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় সহযোগী চেয়ে কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। এমনকি মামলা করতে যেয়েও মামলা নেয়নি পুলিশ

তিনি আরো বলেন, পারুলিয়া মৌজার খলিশাখালী নামীয় ৩০টি খন্ডে বিভক্ত স্থানীয় ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীসহ বহিরাগত সাতক্ষীরা জেলা ও খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী একত্রে সজ্জিত হয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত্র আনুমানিক ২টার দিকে আমাদের লীজ গ্রহীতা সহ নিজেদের চাষাবাদকৃত জমিতে অবৈধভাবে দখল করে। তারা আমাদের কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘেরের সকল বাসা দখল করে এবং কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি ওই রাত্র হতে অদ্যাবধি আমাদের ঘের হতে আনুমানিক ৪ কোটি টাকার মাছ লুটপাট করে নিয়েছে এবং ঘেরে বাসা বাড়ি ভাংচুর করে আনুমানিক ৩৬ লক্ষ টাকা ক্ষতি সাধন করেছে। তাৎক্ষনিকভাবে দেবহাটা থানায় বিষয়টি জ্ঞাত করে প্রতিকার চাইলে দেবহাটা থানা কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। এমনকি উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের কয়েকজন জমির রেকর্ডীয় মালিক দেবহাটা থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেয়। নিরুপায় হয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা কোর্টে মামলা দায়ের করি। আদালত মামলা গ্রহন করে বিপিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

উক্ত জমির রেকর্ডিয় মালিকদের জমি ১৮১২ নং সিএস খতিয়ানে ১১১৭৫ নং দাগ সহ ২৭টি দাগে উপরে উল্লেখিত ৪৩৯.২০ একর জমির সিএস মালিক চন্ডিচরণ ঘোষ। সেখান থেকে বিভিন্ন কোবলা দলিল, পাট্টা দলিল ও কোর্টের রায় অনুযায়ী নিলাম খরিদ মোতাবেক এসএ ২৯৬২ থেকে ২৯৮০ খতিয়ানে রেকর্ড প্রকাশের পূর্বে কলিকাতা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ০৪/০৩/৫৩ তারিখের ৬৯৪ নং বিনিময় দলিল মূলে দেবহাটা থানার শিমুলিয়া গ্রামের তেজেন্দ্র নাথ চৌধূরীর পুত্র সুরেন্দ্রনাথ চৌধূরী এর সাথে বিনিময় করেন। এসএ রেকর্ড পরবর্তী উক্ত বিনিময় দলিলের গ্রহীতা কাজী আব্দুল মালেক এর ওয়ারেশ গণ সহ ক্রমিক হস্থান্তর সূত্রে অপারপর মালিকগণ বর্তমান বিএস জরীপে রেকর্ড প্রাপ্ত হন এবং তৎপরবর্তী প্রিন্ট পর্চা সহ প্রায় ৩০০ মালিক এর নামে প্রায় ২০০টি পর্চায় উক্ত সমুদয় সম্পত্তি গেজেট প্রকাশিত হয় এবং তন্মধ্যে অনেক মালিকগণের হালসন পর্যন্ত খাজনা পরিশাধে করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের সম্পত্তি ভোগদখল করার অসৎ উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ১৮/২০১০ নং জনৈক জনাব আলী একটি মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার স্বত্বের কোন বিচারিক কার্যক্রম শুরু না করে বাদীপক্ষ আদালতে প্রভাব বিস্তার করে নিজস্ব ব্যক্তিবর্গের নামে রিসিভার গ্রহন করে। আমরা অর্থাৎ বিবাদী পক্ষ তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করি যার নং—২১৬/১২ এবং ২৫৬৮/১৭ নং কেসের আদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্ট রিসিভার বিষয়ক বিচার কার্য সম্পন্ন করেন। সেখানে মূল মামলা ১৮/২০১০ খারিজ করা হয় এবং নিম্ন আদালত কর্তৃক রিসিভার বাতিল করা হয়। অর্থাৎ বিবাদীপক্ষ হইকোর্টের আদেশ জেলা যুগ্ম জজ আদালতে দাখিল করলে শুনানী অন্তে মূল মামলা খারিজ করে দেন এবং রিসিভার বাতিল করে দেন। পরবর্তীতে বাদী পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপীল দায়ের করলে শুনানী অন্তে আদেশ দেয় জেলা প্রশাসক উক্ত সম্পত্তির স্বত্ব প্রচারের জন্য নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মামলা চলাকালীন সময়ে উক্ত সম্পত্তি জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।

যেহেতু উক্ত সম্পত্তির সিএস রেকর্ড থেকে এসএ এবং বিএস রেকর্ডের প্রিন্ট পর্চা প্রকৃত মালিকদের নামে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, সেহেতু সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ মামলা দায়ের করা হয়েছে যা বিচারাধীন আছে। যার নং ১৬৮/২১। যেহেতু উক্ত সম্পত্তিতে ১৯৫৩ সাল থেকে সিএস, এসএ রেকর্ড এবং প্রিন্ট পর্চা সহ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে এবং ১৯৫৩ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রায় ৭০ বৎসর নিরবিছিন্নভাবে বিবাদীপক্ষ ভাগে দখলে আছে। সেহেতু অন্য কোন পক্ষের উক্ত সম্পত্তিতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সাথে সাথে আমরা উক্ত অবৈধ দখলদার, ভূমিদস্যু, নামধারী সন্ত্রাসী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলবদ্ধ হয়ে উক্ত ঘের গুলিতে মৎস্য লুটপাট, বাসাবাড়ী ভাংচুর সহ সন্ত্রাসী সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং অতিদ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের উৎখাত করে প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরাধে জানাচ্ছি। তা না হলে যেকোন মূহুর্তে উক্ত এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে যার দায় প্রশাসনের উপর বর্তাবে।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, আমরা সবাই জানি যে, সম্পত্তির অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশে জমি সুরক্ষার অন্যতম উপায় মালিকানা। আর আমরা সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক জবরদখলকৃত সম্পত্তির মালিকানার স্বপক্ষে সকল প্রকার প্রমানাদি আপনাদের সামনে উপস্থিত করে উপস্থাপনা করেছি। তাই আমাদের বিনীত আবেদন, স্থানীয় ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক জবর দখলকৃত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকরা ফিরে পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
রেজাউর রহমান রিজভী: মিডিয়া ম্যানেজার, তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!