নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন

নাটোর জেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়, সদর উপজেলায় ৩৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ২২.৭২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বড়হরিশপুর ইউনিয়ন এবং ১৪টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ১২.৭৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নে।

কৃষি নির্ভরশীল এই অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য মহাসড়কের পাশে দত্তপাড়া, হয়বতপুর, বড়াইগ্রাম উপজেলার আহাম্মদপুর, বনপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম গড়ে উঠেছে শতাধিক আড়ৎ। এই আড়ৎগুলো সৃষ্টি করেছে অত্র এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান।

পাইকারি ক্রেতারা বলছেন নাটোরের উৎপাদিত সবজির মান ভালো হওয়ার কারণে চাহিদা রয়েছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়।নাটোর জেলার সবজির চাহিদা পূরণ করে কৃষকের উৎপাদিত এই সমস্ত সবজি রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।

2 13 নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে
নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে 42

করলা, শিম, ফুলকপি, টমেটো, কাকরোলসহ বিভিন্ন রকমের শীতকালীন সবজি এখন বছরজুড়ে চাষ করছেন কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে জমিতে পানি জমার কারণে কৃষকরা মাচায় উৎপাদন করছে এই সমস্ত সবজি। এতে করে ভোক্তা যেমন বারো মাস পাচ্ছে শীতকালীন সবজি, লাভবান হচ্ছেন কৃষক, অপরদিকে সমৃদ্ধ হচ্ছে অর্থনীতি

কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের প্রচেষ্টা ও সহায়তায় উন্নত জাত ও উন্নত প্রযুক্তি সম্প্রসারনের ফলে, নানারকম সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। আর সারা বছর চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের সবজি পেয়ে খুশি ক্রেতারা।

করলা একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি। একবার চাষে প্রায় তিন মাস গাছ থেকে ফলন পাওয়া যায়। তবে সেটা নাটোরে ব্যাতিক্রম। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর চাষ হচ্ছে করলাসহ নানারকম সবজি।

3 9 নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে
নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে 43

বর্ষায় মাচা করে বছরের প্রায় সব সময় সবজি চাষে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে, এটি ভবিষ্যতে আরো লাভজনক আবাদ হতে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা। এছাড়া অন্যান্য কৃষকরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন সারা বছর লাভজনক সবজি চাষে।

সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের লালমনিপুর গ্রামের কৃষক রসুল ফকির সাময়িকীকে জানান, দশ কাঠা জমিতে মাচায় কাঁকরোলের চাষ করেছি। মাত্র দুই মাসের মধ্যেই আমি ৪০ হাজার টাকার কাঁকরোল বিক্রি করেছি। এ পর্যন্ত জমিতে আমার ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার টাকা। তিনি আশা করেন এই জমি থেকে আরো তিন মাসে ৬০ হাজার টাকার কাঁকরোল বিক্রি করবেন।

সদর উপজেলার লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক আবেদ আলী সাময়িকীকে জানান, এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি, এক মাসে জমিতে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সিম বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকার।জমিতে সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে, আরো চার থেকে পাঁচ মাস ফলন পাবেন বলে তিনি আশা করেন।

5 6 নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে
নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে 44

হয়বতপুর বাজারের আড়ৎদার রহিম উদ্দিন সাময়িকীকে জানান, লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক যে সবজি উৎপাদন করে তা এখানকার আড়ৎতে বিক্রি করেন। এই সবজি কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসেন। অনেক সময় তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। আমরা নিজ দায়িত্বে তাদের মোকামে সবজি পৌঁছে দেই।অনেক সময় তারা নিজেরাই এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।

রাজধানী ঢাকার পাইকারি ক্রেতা আইয়ুব আলী সাময়িকীকে জানান, নাটোরের উৎপাদিত বিষমুক্ত বিশুদ্ধ সবজির চাহিদা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে।মান ভালো আর দাম কম হওয়ার কারণে এখানকার সবজি কিনে নিয়ে গিয়ে লাভের মুখ দেখা যায়।

নাটোর নিচাবাজারে খুচরা বিক্রেতা মো. জালাল আহমেদ সাময়িকীকে জানান, বিগত বছরগুলোতে যেমন সবজির ঘাটতি দেখা দিত, সেই ঘাটতি বর্তমানে বাজারে নেই।গত বছরের তুলনায় এবছর বর্ষা মৌসুমে সবজির আমদানি অনেক বেশি।শীতকালীন হরেক রকম সবজি এখন ক্রেতারা পাচ্ছেন সারাবছর।

4 7 নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে
নাটোরে শীতকালীন সবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে বছরজুড়ে 45

নাটোর স্টেশন বাজারের ভোক্তা ইব্রাহিম মোল্লা সাময়িকীকে জানান, সিম, করোলা, কাঁকরোল, ফুলকপি, মুলা এই সমস্ত সবজি শীতকাল ছাড়া বাজারে পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন আমরা সারা বছরই এই সমস্ত সবজি পাচ্ছি। দামও হাতের নাগালে থাকছে। তবে মরিচের দাম অত্যন্ত বেশি। বিক্রেতারা বর্ষার দোহাই দিচ্ছেন। নাটোর জেলায় তেমন কোনো ভারী বর্ষণ বা বন্যা হয় নাই। তবুও বর্ষার উসিলায় চড়া দামে তারা মরিচ বিক্রি করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার সাময়িকীকে জানান, বর্ষাকালে সবজির স্বল্পতা বিবেচনায় রেখে, সারা বছর ভোক্তারা যেন নিরাপদ সবজি পায়, সে লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এবছর বর্ষা মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৭ শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে তিনি মনে করেন।

নাটোর জেলার উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় কদর বেড়েছে। জেলার চাহিদা পূরণ করে এই সমস্ত সবজি যেমন বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে, তেমনি ভাবে বিদেশে রপ্তানি করা গেলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে অন্যদিকে সমৃদ্ধ হবে নাটোরের অর্থনীতি এমনটাই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!