আমি দীর্ঘ দিন এই বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই যেন বাজারের কিছু বৈশিষ্ট্য অবলিলায় চোখ বুজে দেখতে পাই। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরে, পুঁজিবাজার আগের চেয়ে বেশ ভালো অবস্থান তৈরি করছে। এই অবস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে কমিশন সহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মনিটরিং ব্যবস্থায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বেশ কিছু আইন করেছেন এবং কোম্পানির আভ্যন্তরীন দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে নতুন পলিসি সাপোর্টের পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকান্ড তদারকির জন্যে কর্মকর্তা ও নিয়োগ দিচ্ছেন।
কমিশন ওটিসি মার্কেট নামে কলংকিত জায়গা থেকে সরে এসেছেন। ওটিসি বাজারে যে সব কোম্পানির ঠাঁই হয়েছিল, সে সব কোম্পানি ওটিসিতে কি কারণে গিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা দরকার! ভবিষ্যৎ এ যেন আর এমন হটকারী সিদ্ধান্ত না নেয়া হয় সে ব্যাপারে সচেতনাতার সাথে আগাতে হবে। এতো দিন কিভাবে ওটিসিতে থাকা কোম্পানি ঐ সব কারণ কাটিয়ে উঠে মূল বাজারে এসে ভালো করছে! তাহলে কি বলা যায় ঐ সব কোম্পানি আসলে দূর্বল কোম্পানি ছিল না? না কোন ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার ছিল।
দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে ঘটনা ঘটার পরে মানুষের মধ্যে বুদ্ধি আসে।তা নাহলে ওটিসিতে যাওয়া কোম্পানিগুলির আর্থিক দুরবস্থা কেন আগে বুঝতে পারেনি নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের লোকজন।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে আইসিবির শক্তি বৃদ্ধি ও কাঠামোতে পরিবর্তন আনা দরকার। হয়তো এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়েছে যা বাজার বলে দিচ্ছে! আইসিবির একক শক্তির সাথে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও হতে হবে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। বাজারে সিন্ডিকেট থাকবে। এটা সব দেশের বাজারেই আছে। সিন্ডিকেট বাজারের সৌন্দর্যই বলবো। তবে তাঁদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার, যাতে অতি মাত্রার ক্ষতির কারণ না হয় এই সিন্ডিকেট। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পর কেন বিনিয়োগকারীদের ভাবতে হচ্ছে আগামী কাল কি হবে?! বাজারে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়াতে হবে। তাতে মানুষের বিনিয়োগের ক্ষেত্র বাড়বে। ধান্দাবাজ ও অদক্ষ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তি বন্ধ করলে এবং তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারলে, নিরিক্ষা তথ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।
এতে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বেগ পেতে হবে না। ডে ট্রেডিং বাজারে হয় এবং হতেই হবে। তাই বলে সবাই যদি ডে ট্রেডার হয়ে যায় তাহলে সেই বাজারে বিনিয়োগ করতে সবাই কে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই প্রবণতার প্রধান কারণ দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগে আশানুরূপ রিটার্ন পাচ্ছেন না। এটা অনেক কোম্পানির মালিকদের এক ধরণের মানসিক সমস্যাই বলবো! উনারা যদি ভাবতেন এটি আমার কোম্পানি নয়, আমাদের কোম্পানি, তাহলে বছর শেষে লভ্যাংশ ভালো দিতে এতো কষ্ট লাগতো না।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলে বর্তমান সময়ে ও ১৫% এর বেশি টাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে হতো। সেখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০% লাভ ও জোটে না।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নিরাপদ এবং ঝুঁকি কমে আসবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। ভালো কোম্পানি গুলো শেয়ার বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী নয় বলে শুনেছি। এর কারণ খতিয়ে দেখে তড়িৎ সমাধানের মাধ্যমে ঐ সব কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ এখন থেকেই নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
পরিশেষে বলব পুঁজিবাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সবার সন্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে, ইনশাআল্লাহ একদিন বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বে স্থান করে নিতে পারবে।
লিখেছেনঃ আল আমিন হোসেন
শেয়ার বাজার বিনিয়োগকারী
ঢাকা
লেখার সাথে সহমত পোষন করছি।
আমার মতে খুব দ্রুত অডিট ফারমের ব্যাপারে আইন করা উচিত, যে অডিট ফারম উল্টাপাল্টা রিপোর্ট দিবে,পানিস্মেন্ট হিসাবে লাইসেন্স বাদ যাবে এমন আইন করা দরকার