রঙ তুলি আর স্বপ্নের গল্প

ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী
ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী
13 মিনিটে পড়ুন

আলপথ ধরে দৌড়াচ্ছিল লতিফ। দু’পাশে উঁচু ধান ক্ষেত। ধানের শিষে পাক ধরেছে। লতিফের মাথা ছাড়িয়ে তিরতির বাতাসে কাঁপছে ধানের সোনালি মাথা। মাথার ঝাঁকড়া চুল উড়ছে লতিফের। খালি পা, গায়ে হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি। আরবি ঘোড়ার মত টগবগিয়ে লাফাচ্ছে শরীরটা। বাম হাত মুঠো করা। ডান হাতের মুঠোয় গোল করে পেঁচানো কাগজের ছোট বান্ডিল। কাগজগুলো এক এক করে গুণে সাবধানে মুড়ে নিয়েছিল ও।
এগারোটা এ-ফোর কাগজ। প্রত্যেকটার এক পিঠ ফটফটে সাদা। অন্য পিঠে দু-চার লাইন কিম্বা আধ-পৃষ্ঠা কম্পিউটরে ইংরাজি ছাপাই। সব বাতিল কাগজ কিন্তু লতিফের কাছে দাম আছে। অনেক দাম। ঝকঝকে কাগজের ছাপানো অংশটা কেটে বাদ দিলেও অনেকটা জুড়ে ছবি আঁকা যায়। সাদা কাগজের উপর কালো পেন্সিলের আঁচড় পড়লেই ছবিগুলো ঝকমক করে ওঠে। সে ছবি কম্পিউটরে যদি ছাপানো যায়! নিজের আঁকা বলে মনেই হয় না।
দৌড় থামিয়ে একটা ঝাঁকড়া কুল গাছের নিচে দাঁড়াল লতিফ। ডান হাতে ধরা কাগজ গুলোর দিকে তাকাল। এগারটা কাগজের একটাতে নিজের আঁকা ছবি ছাপানো আছে, ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। এ ছবি বাড়িতে দেখালে কি হবে? আম্মির চোখ কদম ফুল হয়ে যাবে। আর আন্টির কথাটা বললে কী হবে! চোখ উল্টে ভিরমি খেয়ে যাবে আম্মি।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার দৌড় শুরু করল লতিফ। খুব জোরেই দৌড়াচ্ছিল ও। আঁকাবাঁকা আলপথে সতর্ক চোখ। সন্ধ্যা নামলে আল কেউটে নাকি ফনা তুলে তাড়া করে। পাল পাড়ার নিচু এবড়ো খেবড়ো পতিত জমিটা এক নিঃশ্বাসে পার হয়ে গেল। সামনে বাঁক নিয়েছে সরু পথ। সোজা তাকাতেই পুকুর। পাড়ে দোল খাচ্ছে অল্প কয়েকটা কাশফুল। ওদিকে চোখ পড়তেই আবার থামল ও। মাথার উপর আমগাছের ডালে একটা পাখি কুব কুব করে ডাকছে। পথের ধারে একটা মাটির ঢিবির উপর দাঁড়িয়ে ঘাড় উঁচু করল ও। পাখিটা দেখা গেল না। কিন্তু আকাশের আবছা নীলে চোখ পড়ল। উঁচুতে দাঁড়িয়ে ঘাড় সোজা করতেই চোখের সামনে এবার মাঠ ভর্তি কাশফুল। নীল আকাশের নিচে তিরতির বাতাসে সাদা কাশফুলে দোলা দেখলেই দুর্গা পূজা মনে পড়ে যায়। গ্রামের মাঝখানে বাড়ির একটু দূরে পূজা হয়। ঢাক ঢোল বাজে তবে নজর কাড়ে প্রতিমার সাজ। রঙ বাহারি ময়ূর। এসব আঁকতে সাধ হয় কিন্তু রঙ পেলে তো! রমেশ মাস্টারও বলেন, ‘হাতে তুলি ধর। ছবিতে রঙ লাগা।’ কিন্তু রঙের অনেক দাম! তুলিরও। এসব ভাবলেই মনটা ভারি হয়ে যায়।
ভারি মন নিয়ে আবার ছুটতে লাগল লতিফ। একটু দূরে পলাশ ডাঙার উঁচু ধানি জমি। গাঢ় টিয়া রঙের মাঠ-ভর্তি ধান গাছ। নরম মাটিতে সার আর জল খেয়ে লক লক করে বেড়ে উঠেছে। ধানের শিষে রঙ ঢালছে পশ্চিম আকাশের সূর্য। লতিফের মাথা ঢেকে তির তির বাতাসে কাঁপছে ধানের শিষ। বাতাসে হাল্কা হিম হিম ভাব। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। পিছনের আকাশে অনেকটা হেলে পড়ছে সূর্য। সন্ধ্যামণি রং রঙ মেখে সামনের আসমানটা হাসছে। মাঝে মাঝে আকাশের লালে তুলির হালকা কালো পোঁচ। রঙিন আকাশের পটে পশ্চিমে ছুটছে এক সারি ধবধবে বক। বকের পাখায় লালচে আভা। আর একটু পরে সূর্য ডুবে গেলে তখন অন্ধকার। গাছের ডালে ডালে পাখপাখালির কিচমিচ থেমে যাবে। বাঁশঝাড়ে গাছের কোটর বাটরে বাজবে একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক।
আঁধার নামবার আগেই ঘরে ঢুকতে হবে। নয়তো আম্মি ঘর-বার করবে শুধু। পাড়ায় পাড়ায় এ বাড়ি সে বাড়ি গিয়ে তাকে খুঁজবে। বন্ধুদের দেখতে পেয়ে কপাল কুঁচকে সওয়াল করবে, ‘লতিফের খবর জানো তুমরা? না বলে কয়ে কুথায় পালাল ছেলেটা?’ প্যান্টটা কোমরের উপর তুলে হেড স্যারের মত মাথা দুলিয়ে মন্টু বলবে, ‘ফুটবল মাঠে তো যায়নি। আজকাল ওর খেলায় মন নেই। একা একা শহর-বাজারে যায়।’ ব্যাস, এটুকু শুনেই ফর্সা মুখ কালো করে বাড়ির দিকে হনহনিয়ে হাঁটবে আম্মি।
আর হিরুর সাথে যদি দেখা হয়? আম্মিকে আরও চমকে দেবে হীরক কুমার। কালো পানা মুখটা গম্ভীর করে সাদা দাঁতের ঝলক দেখিয়ে চোখ নাচাবে, ‘চাচী, লতিফটা ফুলের পাপড়ি, গাছের পাতা এসব বেঁটে রং বানায়। পাটের তুলি ডুবিয়ে ছবি আঁকে, রং গুলো ধেবড়ে যায়। শহরে গিয়ে রং তুলির দর দাম করে বেড়ায় লতিফ।’ এসব কানে ঢুকলেই ভাঙা দরজায় খিল তুলে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসবে আম্মি, ‘কোন্ হাওয়া লাগলো অট্টুকুন পোলাটার গায়ে। সাঁঝের বেলা কোন নেশার লগে টাউন বাজারে যায় আমার বাপধন?’
মুন্নি মাদ্রাসা থেকে ফিরে বই খাতা মাদুরে রেখে হাত-পা ধুতে ধুতে কলতলা থেকে চিৎকার করবে, ‘বাড়ি ফিরলে তখন তো বকতে পারবা না। মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে খাওয়াতে লাগবা।’
এ কথা কানে ঢুকতেই হাঁউমাউ করে চোখের জল ফেলবে আম্মি, ‘ছেলেটারে কী আর খাবার দিব? একটু মুড়ি আর দু-চারখান নাড়ু। ঘরে আমার আর কিছু আছে?’
‘কাঁদো কেন আম্মি’ বলে ছুটে আসবে মুন্নি। কিন্তু আম্মি থামবে না। একটানা বলতেই থাকবে, ‘হায়রে নসীব! ধান উঠলে তবু হাতে পয়সা একটু থাকতো। অত বড় নাবাল জমিটা বেবাক ডুবে গেল। মনসা ঢিবির নিচে ধানের চারা গুলান পচে গেল রে! হায় রে নসীব! তোর আব্বা কাজ-কামের আশায় সেই থেকে ঘুরছে খালি।’
দেরি হলেই এসব কথা শুনতে হবে, লতিফ জানে। কিন্তু আজ দেরি হ’ল বটে কিন্তু আম্মি ওকে দেখল না। রমিনা ফুফুর সাথে গল্পে মশগুল আম্মি। পিরোজপুর থেকে রিক্সা করে ফুফু এসেছে মেয়ের শাদির দাওয়াত নিয়ে। আম্মির ঘরে একবার উঁকি মেরে বারান্দার কোণে হাতের কাগজ গুলো রেখে হাত মুখ ধুতে গেল লতিফ। তখন ফিকে আঁধারে আবছা কলতলা। টিপকল থেকে বালতিতে জল ভরতে ভরতে একটু থামল লতিফ। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশ দেখল। আশপাশের বাড়ি গুলোতে বিজলি বাতি জ্বলছে। এবার ওদের বাড়িতেও কারেন্টের আলো জ্বলতো। ভাবছিল লতিফ। পাকা কথা দিয়েছিল বিদ্যুৎ আফিসের দুই বাবু, স্বপন কর আর মদন বর। কিন্তু টাকার যোগান হোল না। দু-দিনের আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি ফসল ভাসিয়ে দিল। ঋণ কজ্জে ডুবে বছরের খোরাকির চিন্তায় আব্বার পাগল পারা দশা। বাড়িও অন্ধকার।
অন্ধকার ঘরে লণ্ঠনের আলো জ্বলছে। একটু পরে ফুফু চলে গেলে ঘরে ঢুকলো লতিফ। মায়ের মুখে একটা খুশি খুশি ভাব। ফতেমা হাসি মুখে একটা জামবাটি এগিয়ে ধরল লতিফের দিকে। আজকে শহরে গিয়ে আন্টির সঙ্গে মোলাকাতের খবর এই সুযোগে মাকে জানিয়ে দেবে, ভাবছিল ও। মায়ের পাশে বসে লন্ঠনের মিটমিটে আলোয় মুড়ি আর তিলের নাড়ু খেতে খেতে মুখ তুলল লতিফ। ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল ফতেমা। লতিফের কপাল থেকে চোখের উপর নেমে আসা চুলের গোছা ডান হাতে সরিয়ে নরম গলায় ফতেমা বললো, ‘শহরে বাজারে যাস কেন রে?’
কিছুক্ষন চুপ থাকল লতিফ। আম্মির প্রশ্নে মনের কথা গুলো বলা সহজ হয়ে গেল। এক ঢোক জল খেল। মোলায়েম গলা। সাবধানে, আম্মি যাতে রাগ না করে সে-ভাবেই শুরু করল, ‘শহরে গিয়ে অনেক লাভ হয় আম্মা। আজ মেলাই জিনিস এনেছি?’
-কী আনলি তুই? শহরে গিয়ে ভিখ মাগিস নাকি?
-ভিখ মাংবো কেন? কামাই করবো আম্মা।
তিরের মত হঠাৎ ছুটে আসা লতিফের কথায় ফতেমার চোখ দু’টো গোল গোল হয়ে গেল। লতিফের মুখের দিকে তাকিয়ে গলা তুলল ফতেমা।
-কার বাড়িতে চাকর গিরি করবি তুই?
-মাস্টারি করবো আম্মা।
ঘরে চুল বাঁধছিল মুন্নি। লতিফের কথায় চোখ কপালে তুলে লাফিয়ে উঠল, ‘জিন পরি ধরল নাকি রে? ছয় কেলাসের পুচকে ছেলে, কে তোকে মাস্টারি দিবে?’
ঢক ঢক করে অনেকটা জল গলায় ঢেলে মুন্নির ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকল লতিফ। একটু পরে মিহি গলায় গল্প শুরু করল, ‘বাজারে ঢুকবার আগে একটা দোকান লেগেছে, ‘কম্পিউটর পোস্ট’। যতন করে সাজানো ঘর। মালকিন প্যান্ট জামা পড়ে দোকান চালায়। গলায় মুক্তার মালা ঝুলিয়ে গটমটিয়ে হাঁটে…।’
ওর কথার মাঝখানে মুন্নির সওয়াল, ‘মুক্তা চিনিস তুই?’
-চিনবো না?’ চোখা উত্তর লতিফের, ‘আব্বু বলেছে। আসমানের এক রকম তারার হাসি পানি হয়ে সাগরে পড়লেই দুধের মত সাদা মুক্তা তৈরি হয়ে যায়’।
-আব্বু আর কী বলেছে?
-আরবি ঘোড়ার গল্প…।
-ঠিক আছে, এবার তোর আন্টির কথা বল।’ বেণী দুলিয়ে চুপ করে বসলো মুন্নি।
-আমার মত ছেলে আছে আন্টির। আর ধবলা একটা ছোট মেয়ে। আজ বিকেলে মেয়ের হাত ধরে দোকানের সামনে বড় রাস্তায় হাঁটছিল আন্টি।’
-তুই আদেখলার মত দেখছিলি?’
-না না। আমি সামনে গিয়ে বললাম, ‘আদাপ আন্টি’।
হাঁটা থামিয়ে আমার দিকে তাকাল নীল প্যান্ট পরা আন্টি। আমি মুখ তুলে বললাম ‘তোমার দোকানের সাদা কাগজগুলো না-ছিড়ে আমাকে দিয়ে দাও। এক পিঠ সাদা হলেই আমি ছবি আঁকতে পারবো।’
চোখ বড় করে আমাকে দেখল আন্টি। বলল, ‘ছবি আঁকিস? আমার সামনে বসে আঁকতো দেখি!’
একটা পেনসিল আর সাদা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বাইরের বারান্দায় বসাল। আমি একমনে দুলদুল আঁকলাম। পয়গম্বরের সাদা ঘোড়া। গায়ে বাহারি চাদর। টগবগিয়ে ছোটে। কিন্তু রঙ ছাড়া কি এ ছবি ফোটে! পেনসিলের কালো রঙে ভালো হয় নি ছবিটা। ছবিটা দেখে চোখ কুঁচকে আন্টি বলল, ‘আরেকটা আঁকতো দেখি।’
আমি বুঝলাম ছবিটা পছন্দ হয় নি আন্টির। মনে মনে বললাম, ভালো রঙ তুলি পেলে এ ছবি ঠিক ফুটিয়ে দিতাম।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আন্টি বলল, ‘কিরে, আরেকটা ছবি আঁক।’
আমি ঝট ঝট করে একটা বক আঁকলাম। ভাতিয়া বিলে কাদা মাখা জলে মাছের আশায় এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে বকটা। আমার আঁকা বকটার ছবি দেখে ‘ফ্যান্টাস্টিক’ ‘ফ্যান্টাস্টিক’ বলে লাফিয়ে উঠল আন্টি। তারপর কম্পিউটারে ছাপিয়ে দিল। এই দেখো।’
লতিফের হাতে ধরা ছবির দিকে হাঁ-হয়ে তাকিয়ে থাকল সবাই। ততক্ষনে রতন মোদকের আড়াই বিঘা জমিতে নিড়ানি দিয়ে লবন আর পিঁয়াজ কিনে ঘরে ঢুকেছে আফজাল।
আনমনা দৃষ্টিতে ফতেমা বলল, ‘ছবি এঁকে লাভ কি? কুন দাম আছে এর?’
মুখ খুলল মুন্নি, ‘আব্বা আম্মি, ছবির দাম আছে। বিক্রি করলে অভাব থাকবে না ঘরে।’
সাদা দাঁত বের করে হাসল আফজাল, মুখে আঁধার। বুক খালি করা একটা শ্বাস ফেলল, ‘কী ছবি আঁকবা তুমরা?’
-কুমোর পাড়ার মেয়েদের পারা পট ঘট আঁকবো। চটের উপর নক্সা ফুটাবো’, চটজলদি জবাব মুন্নির।
আফজালের স্বরে হতাশা, ‘ছবি বেচবা কুথা?’
-শহরের মেলায় বিক্রি হয় আব্বু। আমরা পারবো না বেচতে?
মেয়ের মুখের দিকে তকাল আফজাল, ‘জমির ধান সব্জি বেচতে জানি। ছবির মেলা চিনলে তো বেচতে যাবো!’
ভাত আর লাউ-এর তরকারি চাপাতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিল ফতেমা। হাঁটু ধরে মাকে বসাল লতিফ, ‘আম্মা ছবির দাম, দোকানদারী সব খবর রমেশ মাষ্টারের কাছে আমি জেনে নিব। এখন শোন আমার ছবির দাম।’
-তোর ছবির আবার কী দাম?’ গামছা দিয়ে মশা তাড়াতে তাড়াতে আফজাল বলল, ‘তোর আম্মা কত ছবি ফুল পাখি আঁকতো। কাপড়ে নক্সা ফুটাত। দাম আছে মালুম হলে বাজার খুঁজে বেচে আসতাম।’
ছেলের পিঠে একটা চাঁটি মারল ফতেমা, ‘তোর ছবির কথা কি বলছিলি? জলদি বল। ঢের কাজ বাকী আমার।’
একটা বড় হাঁই তুলল লতিফ। মায়ের দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে সাজানো কথা গুলো চটপট বলে ফেলল, ‘শহরের আন্টি ওর মেয়েকে ছবি আঁকা শেখাতে বলেছে। বিকালে এক ঘণ্টা, সপ্তাহে দু’তিন দিন। মাইনা দেবে।’
ঘর জুড়ে নিস্তব্ধতা। একটু পরে আবার মুখ খুলল লতিফ, ‘পয়সা পেলে রঙ তুলি কিনতে পারবো আম্মি। আমাকে যেতে দিবা তো? সকালে উঠে ইস্কুলের পড়া ঠিক করে নিব।’
-চুপ করে থাক। এত্তুকুনা ছেলে পয়সা আনবে ঘরে? গলায় দড়ি দিব আমি।
প্রথমে ঝাঁজিয়ে উঠলেও পরে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো ফতেমা। আর লতিফের বাবা আফজাল মাথা নিচু করে নিঃশব্দে অনেকক্ষণ বসে থাকল। একটু পরে বড় একটা শ্বাস ফেলে ছেলের থুতনিতে আঙুল ছোঁয়াল। ধীরে ধীরে বলল, ‘লতিফ বেটা, মাস্টারিটা মন লাগিয়ে কর। গাধার মত রাত দিন গাটারি টেনে ডাল ভাতের যোগানটা দিই আমি। রঙ তুলির খরচা তো দিতে পারবো না বাপ।’
আধো অন্ধকার ঘরে ঘুমে ঢুলতে থাকা ছেলের দিকে আরেকবার তাকাল আফজাল। বড় একটা হাঁই তুলে বলল, ‘এবার থেকে নিজের পয়সায় কাগজ তুলি কিন তুই। তুলিতে রঙ লাগিয়ে জবরদস্ত ছবি আঁক বেটা। গাছ আকাশ ফুল পাখি। দুনিয়ায় কত রঙ!’
লতিফের মনে হল, হঠাৎ রঙিন আলোয় ভরে উঠেছে অন্ধকার ঘরটা। ঘোর লাগা দু’চোখে রঙিন ছবি আঁকতে আঁকতে আব্বার কোলে মাথা রাখল লতিফ। ওর স্বপ্নে তখন সাদা ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে রঙিন চাদর। সকালের আলোয় বাহারি সাজে টগবগিয়ে ছুটছে দুলদুল।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ড.সৌমিত্র কুমার চৌধুরী, ভূতপূর্ব বিভাগীয় প্রধান ও এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় কর্কট রোগ গবেষণা সংস্থাণ, কলকাতা-700 026. প্রকাশিত গ্রন্থ- বিজ্ঞানের জানা অজানা (কিশোর উপযোগী বিজ্ঞান), আমার বাগান (গল্পগ্রন্থ), এবং বিদেশী সংস্থায় গবেষণা গ্রন্থ: Anticancer Drugs-Nature synthesis and cell (Intech)। পুরষ্কার সমূহ: ‘যোগমায়া স্মৃতি পুরস্কার’ (২০১৫), জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকায় বছরের শ্রেষ্ঠ রচনার জন্য। ‘চৌরঙ্গী নাথ’ পুরস্কার (২০১৮), শৈব ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসের জন্য। গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরষ্কার (2019), পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি দফতর থেকে), পঁচিশ বছরের অধিক কাল বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় বিজ্ঞান রচনার জন্য)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!