স্বর্ণশিল্পী যখন পথ-চা বিক্রেতা: খবর রাখেনা কেউ!

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন
স্বর্ণশিল্পী সাধন চাকী। ছবি: মাহাবুব খন্দকার

দুই হাতে রয়েছে দুইটি ব্যাগ।একটি ব্যাগের ফ্লাক্সে ৫০ কাপ চা। অন্য ব্যাগের ভিতর ৫০টি গ্লাস এবং এক বোতল পানি। এই হচ্ছে সাধনের সংসার পরিচালনার শেষ সম্বল। তিনি প্রায় ২০ বছর যাবৎ স্বর্ণশিল্পের একজন কারিগর।

করোনাকালীন এই সময়ে পেটের তাগিদে সংসারের হাল ধরতে নিজ কর্ম না থাকায় এই পেশাতে নামতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। নাটোর পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ডের লালবাজার ও পিলখানা মহল্লার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছে সাধন চাকী।

পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ডের হরেনের মোড়ের মৃত রাম চাকীর ছেলে সাধন দুই ছেলের জনক। বড় ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করেন আর ছোট মেয়ে মাত্র তিন বছরের। চারজনের এই সংসার চলছিল বেশ ভালই। সাধন প্রতিমাসে গড়ে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা রোজগার করতেন।

গত বছরের ২৬ শে মার্চ থেকে সরকারি বিধি-নিষেধ আরোপ হওয়ার পরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সাধন হয়ে যায় কর্মহীন। সংসারে যা কিছু হয়েছিল গচ্ছিত দুই-এক মাসের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যায়। পরিবার নিয়ে খাদ্য সংকটে পড়ে সাধন।

- বিজ্ঞাপন -

অবশেষে পৌরসভা থেকে পায় খাদ্য সহায়তা। সেই খাদ্য সহায়তার ২০০ টাকার চাউল বিক্রি করে স্থানীয় একটি ক্রোকারিজের দোকান থেকে বারোশো টাকা মূল্যের একটি ফ্লাক্স কেনেন ১ হাজার টাকা বাঁকিতে। ৫০ কাপ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ফ্লাক্স নিয়ে তিনি নিজ এলাকায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন।

সকালে আর বিকালে দুইবারে প্রত্যহ তিনি ১ শত কাপ চা বিক্রি করেন।প্রতিদিন রোজগার হয় ১৭০ থেকে ২ শত টাকা। প্রতিদিন তার সংসার ব্যয় ৩ শত টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ঘাটতি পড়ছে মূল পুঁজিতে।বাধ্য হয়েই পরিচিত জনের কাছে হাত বাড়াতে হচ্ছে তাকে।এভাবেই কাটছে সাধনের দিন।

সাধনের সঙ্গে কথা হয় সাময়িকীর এই প্রতিবেদকের তিনি জানান, ‘পরিবারের খাদ্য সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রীতিমতো। সামান্য কিছু গচ্ছিত অর্থ ছিল, হয়তো দুই এক মাসের মধ্যে দোকানপাট খুলবে, সেই আশায় বসে বসে খেয়েছি। এখন রীতিমত পরিবার নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি। আমার মতন প্রায় ১ হাজার জুয়েলারি কারিগরের এমনই অবস্থা।

কারিগর ইউনিয়নের ভূমিকা নেই। অথচ ইউনিয়ন বহুমুখী বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। গতবছর করোনাকালীন সময়ের শুরুতে, সরকারিভাবে অর্থ দেওয়া হবে এই বলে ইউনিয়নের কার্ড করে দেওয়ার নামে তারা প্রায় ১ হাজার কারিগরের কাছে ৩ শত করে টাকা বাগিয়ে নিয়েছে। অথচ কারিগরদেরকে কোন রকম সহায়তা দেওয়া হয়নি।

কারিগর ইউনিয়নের কার্ড বাবদ যে অর্থগুলো উত্তোলন হয় সেই অর্থের কোন হিসাব কেউ কখনো দেয়না। জুয়েলারি মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও দুস্ত কারিগরদের জন্য কোন বরাদ্দই থাকেনা। এমত অবস্থায় আমরা কোথায় দাঁড়াবো? কার কাছে কি চাইব আর কাকেই বা কি বলবো ?’ এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সাধন চাকী।

- বিজ্ঞাপন -
2 1 স্বর্ণশিল্পী যখন পথ-চা বিক্রেতা: খবর রাখেনা কেউ!
স্বর্ণশিল্পী যখন পথ-চা বিক্রেতা: খবর রাখেনা কেউ! 39

জুয়েলারি কারিগর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আহমেদ সাময়িকীকে জানান, ‘স্বর্ণশিল্পের কারিগর ইউনিয়ন পরিচালনা করতে কোন চাঁদা তোলা হয় না। ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্যদের অর্থেই ইউনিয়ন পরিচালিত হয়।ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য প্রায় ১ হাজার। ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কারিগর রয়েছে প্রায় ৪ হাজার।

এই সমস্ত কারিগরদের মধ্যে অনেকেই বিত্তবান ও সচ্ছল রয়েছে। তবে প্রায় ৫ শতাধিক কারিগর অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করছে। কেউ ফেরি করে চা বিক্রি করছে, কেউ বা কলা বিক্রি করছে, কেউ সবজির দোকান দিয়েছ, আর কেউ কেউ বেকার দিশেহারা হয়ে হয়ে ঘুরছে পথে পথে ।

যদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয় তাহলে সরকারের কাছে আমাদের কোন আরজি নেই। আর যদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে এই সমস্ত দরিদ্র কারিগরদেরকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ’ করলেন তিনি।

- বিজ্ঞাপন -

নাটোর জেলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভবেশ চক্রবর্তী (ভক্ত) সাময়িকীকে জানান, যদি কোন স্বর্ণ শিল্পের দোকানদার স্বইচ্ছায় অসচ্ছল কারিগরদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয় সেটা তার ব্যক্তিগত মনের ব্যাপার। জুয়েলারি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কারিগরদেরকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ সাময়িকীকে জানান, ‘মহামারী করোনাকালীন এই সময়ে স্বর্ণশিল্পীর সঙ্গে সম্পৃক্ত যে সমস্ত কারিগররা মানবেতর জীবনযাপন করছে দ্রুত তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সাময়িকীর অনুসন্ধান বলছে নাটোর জেলায় প্রায় ১০ হাজারের অধিক রয়েছে জুয়েলারি কারিগর। যাদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজারের অধিক কারিগর রয়েছে সাধনের মতন খাদ্য সংকটে।

নাটোরের সুশীল সমাজের নাগরিকদের দাবি অনেক বিত্তবান জুয়েলারি মালিক আছেন, একজনেই ৫ হাজার কারিগরের এক বছরের খাদ্য সহায়তা দিতে পারেন।অতি দ্রুত অনাহারী ও দুস্থ এই সমস্ত স্বর্ণশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত জুয়েলারি কারিগরদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হোক।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

একটি অ্যাকাউন্ট নেই? নিবন্ধন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!