কবি কৃষ্ণা গুহ রায়ের ছ’টি কবিতা

কৃষ্ণা গুহ রায়
কৃষ্ণা গুহ রায়
3 মিনিটে পড়ুন

কালচক্র

জঙলা ঝিলের পাশ থেকে যে পথটা এঁকেবেকেঁ
গিয়ে পৌছেছে যজ্ঞডুমুরের বাঁধানো চাতালে,
ওখানেই গেলবারের গাজনের মেলায় তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা,
ও পথে এখন আর যাওয়া হয় না৷
মন খারাপের উঠোনে জমাট বাঁধা শ্যাওলারা
এখন তোমাকে ছুঁয়ে শব্দ বাঁধে,
সেই নদীর প্লাবনে ভাসে দুকুল
শেষের থেকে শুরু
পূর্ণ যতি চিহ্ন রঙ তুলিতে আঁকে কালচক্র৷

নতুন ধানের দেশে

অগ্রহায়ণের কোনও এক দিন দুপুরে তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা,
কথার তরঙ্গে প্রতিদিন জানাতে নিরন্তর শুভকামনা,
নিঃশব্দে বয়ে চলা নদীর স্রোতে ভেসে যেত তোমার মন ভাল রাখার দিস্তা,
এক সময় খড়ের গোলায় হেমন্তের নতুন ধান গন্ধ ছড়াতো,
বুলবুলি যেদিন শেষ শস্যটা ঠোঁটে তুলে উড়ে গিয়েছিল,
সেদিন থেকেই ধানের গোলায় শূণ্যতার বাসা,
বড্ড ইচ্ছে করে নির্জন হেমন্তী বিকেলে নতুন ধানের দেশে
তোমার আঙুল ছুঁয়ে আলপথ ধরে হেটে
হিমঝুড়ির শান বাঁধানো চাতালে তোমার বুকে পানকৌড়ি হতে৷

পাহাড় কথা বলে

সাত্যকী তুমি আমাকে পাহাড় দেখা শিখিয়েছিলে৷
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে নাম না জানা রঙীন ফুলের
স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মনের ক্যানভাসে একে দিতো ভালবাসার স্বস্তিকা৷
পাহাড়ী ঝর্ণার কলকল শব্দে মিশে যেত আমাদের নীরব নিবিড় অনুভূতি৷
হাত দিয়ে না ছুলেও মনের ছোয়ায় আজও তা যত্নে সুরক্ষিত আছে মনের কুলুঙ্গিতে৷
সুতোর মতন আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথের ধারে
নেপালী চা ওয়ালার গরম চায়ের কাপে যখন উষ্ণ হয় ঠোট৷
ছটফটে তুমি কানের কাছে ফিসফিস করে বলো পাহাড় কথা বলে৷

বেশরম

রুক্ষ মনের দরজাটায় যে দিন তুমি ধাক্কা দিলে,
আমি তখন ছন্নমতি, সৃষ্টিছাড়ি,
আমার অপ্রেমের কাব্য কথা,
তোমার দস্যি প্রেমের কাছে তখন স্বেচ্ছাবন্দী,
মন কেমনের নির্জন দুপুরে,
তোমার কবোষ্ণ ওমের নিঃশ্বাসে,
সেদিন চিত্রিত হয়েছিল খাজুরাহো ৷
তির তির বয়ে চলা কথা নদীও গোপন রাখতে জানে অসামাজিক দাম্পত্যর শব্দ ৷
কুন্দনের মালার মাঝখানে দুই স্তনের খাঁজে এখনও লেগে আছে
কাঁচাপাকা গোঁফের তলার উদ্ধত ভেজা চুম্বন৷
নিন্দুকেরা আরও একবার বলুক বেহায়া, বেশরম৷

ইচ্ছে হলে

তোমার আঙুল ছুঁয়ে পাশাপাশি হাটাই যায় ,
তোমার বুকে মাথা রেখে দুচোখ ভেজানোই যায় ,
আমার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে তুমি বলতেই পারো ,
একটু যত্ন নিও তাহলে আমি ভালো থাকবো ,
তোমার সঙ্গে কাঞ্চণজঙ্ঘার সোনালী আলো
দু চোখ ভরে দেখাই যায়
পাহাড়ী পথে তুষার ঝড়ে তোমার হাত ধরে হারানোই যায়,
ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে কোণারকের জীবন্ত ভাস্কর্য হতেই পারো,
একসঙ্গে মন্দারমণি যেতেই পারো,
জোয়ারের সময় ঢেউগুলোকে সামলে রেখে নোনা জলে গোল্লাছুট হতেই পারো,
ইচ্ছে হলে বালির তটে ঝাউয়ের তলায় আঙুলগুলো ছুঁতেই পারো৷

গোপন কথা

তুমিই আমাকে আকাশ দেখা শিখিয়েছো সাত্যকী,
ভালবাসার রোদ্দুরে লিখেছো আমাকে নিয়ে একের পর এক কবিতা,
গোধূলির রঙে কথার আদরে বুলিয়েছো আমার চোখ,কান,ঠোট৷
রাতের আকাশের জোছনা বৃষ্টিতে তোমার ঘুম ভেজা মনে মিশে গেছে আমার নীল শীৎকার৷
আকাশের বাহারি রঙের রঙ্গোলিতে তুলির টানে জীবন্ত হোক আমাদের গোপন রাতের গোপন কথা৷

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
নিবাস -পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ৷ সন্দেশ, নবকল্লোল, শুকতারা, বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে৷ কবিতা সঙ্কলন তিনটি, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে৷ বর্তমানে আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা , বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন ওয়েবজিনে লেখার সঙ্গে যুক্ত৷ কলকাতা স্বপ্নরাগ পরিবার নামে একটি সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক৷
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!