নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন

প্রকৃতি তার অমোঘ নিয়মে যখন উদারতা দেখায়, তখন আমরা তার কাছ থেকে পাই স্নেহের পরশ। আবার যখন সে রুদ্রমূর্তিতে আবির্র্ভূত হয়, তখন আমরা তার রোষানলে পড়ি। আমাদের দ্রুত যে সামাজিক এবং জীবন-জীবিকার বৈষম্য, তা ছড়িয়েছে নদ-নদীর পানিশূন্যতা আর তার নাব্য হারানোর কারণে।

নদ-নদীর দেশে নদ-নদীর ছিল, এখনও তা আছে। তবে দিন দিন নদ-নদী হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা নদ-নদীকে হারিয়ে ফেলছি। নদ-নদী টিকছে না। নদ-নদী মরছে আর মরা নদ-নদী মানুষের দখলে আসছে। অথবা বলতে পারি নদ-নদীকে মেরে আমরা তা দখলে নিচ্ছি।

2 19 নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার
নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার 42

নদ-নদী মরে; কিন্তু দখল কখনও মরে না। তেমনি একটি মৃত নদ নাটোরের নারদ। নাটোরের এই নারদ নদ নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার। কখনো নারদ নদ পরিষ্কার, কখনো এর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, এসমস্ত নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সময়।

ঢাকঢোল পিটিয়ে, মিডিয়া ডেকে, ক্যামেরার ফ্লাশ টিপে শুরু করছে কাজকর্ম। বুল ডোজার দিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছে কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা। সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় ধন্য ধন্য পড়ে যাচ্ছে প্রশাসনের এসব কর্মকাণ্ডের ভূয়শী প্রশংসায়।

তারপর কয়েকদিন পার হলেই অদৃশ্য কারণে থমকে যাচ্ছে সব কার্যক্রম। এইসব ঘটনা দেখতে দেখতে নাটোরবাসী চোখ পচে গেছে। নাটোরের সিংড়া, নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে গুড়নই নদী। এই নদীতে এখন পানি থইথই করছে।

চলনবিল আর হালতির বিলে উপচে পড়ছে পানি। কানায় কানায় ভরে আছে নাটোরের ছোট-বড় প্রায় ১৯টি বিল। সড়ক-মহাসড়কে বৃষ্টির পানি জমে আছে, অথচ নারদ‘এর বুকে নেই পানি।

3 14 নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার
নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার 43

নাটোর শহরের সমস্ত পুকুর, দিঘী, জলাশয়ের সঙ্গে নারদ এর সংযোগ থাকলেও সেই সমস্ত পানি নিষ্কাশনের পথগুলো আজ অবরুদ্ধ। অবৈধ দখলদারের দখলে আছে বছরের পর বছর। নারদ সংস্কার ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান চললেও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না নারদ নদ।

রাষ্ট্রের জরুরী কাজ ফেলে রেখে প্রশাসন দফায় দফায় সরকারি অর্থ ব্যয় করে অনেক পরিকল্পনা করলেও আলোর মুখ দেখছেনা সেই সব পরিকল্পনা। কোথাকার কোন ইশারায় থমকে যায় নারদ উদ্ধার কার্যক্রম, তা কি কেউ জানে ?

বর্তমান চিত্র দেখলে কেউ কি বিশ্বাস করবেন! এই নারদ নদ দিয়ে একদিন লঞ্চ, স্টিমার, গহনার নৌকা, পানসি নৌকা চলত ? সরকারি তেলের অপচয় করে, বিশাল গাড়িবহর নিয়ে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ শেষে, নারদ নদ নিয়ে নেওয়া পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

শুধু কি সরকারি তেলের অপচয়! সরকারি কর্তাদের মূল্যবান সময় অপচয়, সেইসাথে তৈলো মর্দনকারীদের ভূয়সী প্রশংসার সাগর পার হয়ে চোখের সামনে দেখা যায় শুধুই শূন্যতা। বিভিন্ন দল বিভিন্ন মত বিভিন্ন পথ ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানা নামে-বেনামে নাটোর রয়েছে অনেকগুলি সংগঠন।

তারা নদী বাঁচাও আন্দোলন করছেন, মিটিং করছেন মিছিল করছেন বৈঠক করছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কাজের কাজ লবডঙ্কা।ইতিপূর্বে কোটি কোটি টাকা ব্যয় খনন করা হয়েছিল নারদ নদ। সে কথা আর নাইবা বললাম। কোটি কোটি টাকা ফেলা হয়েছিল জলে।

4 15 নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার
নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার 44

কোথায় কখন কোন টাকা কিভাবে ব্যয় হয়েছিল কিংবা কারা তসরুপ করেছিল তার হিসাব আর নাটোরবাসী জানেন না। তবে জানেন নারদ নদ খনন হয়েছিল। একবার তো নাটোরের এক প্রশাসন প্রধান, মাজায় কাপড় পেচিয়ে নারদের কালো জলে নেবে এর উদ্ধারকাজ ও পরিষ্কার পরিছন্নতা অভিযানে নেমে ছিলেন।

সে অনেক কাল হয়ে গেল, নারদ‘এর কালো জল কালো ই থেকে গেল, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আজও। আরে বাবা নারদ নদ তার যৌবন ফিরে পাক আর না পাক, অন্তত শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য হতে পারে অন্যতম মাধ্যম।

নারদ নদ খনন করে এর দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করলে মানুষের চলাচলের রাস্তা যেমন হয়, তেমনি সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় শহরের। কিন্তু কে শোনে কার কথা, কে নেয় কার উদ্যোগ।শহরের এখানে-সেখানে জলাবদ্ধতা, নেই ড্রেন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে নাটোর শহর পরিণত হতে চলেছে আবর্জনার ভাগাড়ে।

বরঞ্চ শহরের ভেতর দিয়ে সরকারি যে খালগুলো ছিল দিনের পর দিন সেগুলো দখল করে হজম করে ফেলা হয়েছে। সেসব খাল উদ্ধারে নেই কোনো তৎপরতা। পরিকল্পিত শহর নির্মাণ ও শহর রক্ষায় নারদ নদ খনন এর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এখন সময়ের দাবি।

5 10 নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার
নাটোরের নারদ নদ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার 45

কিন্তু! কে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে। বার বার বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তারা নাটোর ভ্রমণে এসে আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে গেলেও, তা নাটোর বাসীর জন্য শুধু স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।

কবে সে আশার বাণী সফলতার মুখ দেখবে এ প্রশ্ন আজ সবার। নারদ এভাবেই নাটোরবাসীর কাছ থেকে হারিয়ে যাবে? নাকি উদ্ধার হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর কে দেবে!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!