এভাবেও ভাল থাকা যায় (১৫তম পর্ব)

মণিজিঞ্জির সান্যাল
মণিজিঞ্জির সান্যাল
6 মিনিটে পড়ুন
ছবি প্রতীকী

প্রেম ভালোবাসা দাম্পত্য

একটা গোটা উপন্যাস না পড়লে যেমন চরিত্রগুলো বা ঘটনার বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা যায় না, অজানা থেকে যায় অনেক কিছু; তেমন-ই একটা মানুষ মানেও একটা গোটা উপন্যাস। কাউকে ভালোবাসলে তাঁর গোটাটা মানে তাঁর সবটাকেই ভালোবাসতে হবে; তাঁকে ভালোভাবে বুঝতে হবে, জানতে হবে, পড়তে হবে। নইলে সেটা ভালোবাসা নয়, সেই সম্পর্ক বন্ধুত্ব বা প্রেম যাই হোক।

ফোন বা মেসেজ বা দেখাটাই বন্ধুত্ব বা প্রেমের চাবিকাঠি হতে পারে না। একটা কথা ভাবলে অবাক লাগে ! পৃথিবীতে কতো মানুষ। তাঁরা প্রত্যেকে দেখতে আলাদা আলাদা। ভাবলে অবাক লাগে এই আলাদা আলাদা মুখগুলোকে নিয়ে। পাশাপাশি তখন একটা ভাবনা মনের মধ্যে এসেই যায়, এই মুখগুলোকে কখনোই একরকম করা যাবে না । বাইরের রূপকে যদি একরকম করা না যায়, তাহলে প্রত্যেকের ভেতরের চেহারাটা এক হতে যাবে কেন? প্রত্যেকের বাইরের চেহারার মতো ভেতরের চেহারাও ঠিক আলাদা। আর এটাই স্বাভাবিক। আসলে কাউকে ভালোবাসলে অনেকক্ষেত্রেই মনে হয় সে আমার মতোই হোক; আমার ভাবনার সাথে তাঁর ভাবনার জায়গাটা মিশেমিশে একাকার হয়ে যাক। আর না হলেই সংঘাত। মনে হয় এই বুঝি সে আমার থেকে দূরে চলে গেল। এই বুঝি সে পালটে গেল।

একটা মন অন্য একটা মনের দাসত্বকে মেনে নেবে কেন? প্রতিটি মানুষের ভাবনা আলাদা। জীবন বোধ আলাদা। হ্যাঁ অনেক কিছু আবার নিজের থেকেই মিলে যায়। দুজন মানুষের মনের ভাবনা আলাদা থেকেও কিন্তু পরস্পরের ভাবনার জায়গাটাকে সম্মান করা উচিত। আমি আস্তিক, সে নাস্তিক হলে আমার অসুবিধে কোথায়; হ্যাঁ অসুবিধে সেখানেই যদি সে আমার ভাবনার জায়গাটাকে বা আমার বিশ্বাসকে আঘাত করে।

কেউ গান শুনতে ভালোবাসে। কেউ কবিতা শুনতে ভালোবাসে। কেউ ফুটবল খেলা দেখতে ভালোবাসে; কেউ আবার বাগান করতে ভালোবাসে।
এক্ষেত্রে একজন কবিতা ভালোবাসে বলেই তার প্রিয় মানুষটিকে কবিতা ভালোবাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু। কেউ গল্প লেখে বা উপন্যাস লেখে কিম্বা কেউ প্রচন্ড বই পড়তে ভালোবাসে, এবারে যদি সে ভাবে তার কাছের মানুষটিকেও তার মতো হতে হবে, তাহলে কিন্তু একদম ভুল করবে সে। নিজের মনকে অন্য একটা মন চালনা করতে পারেনা কিছুতেই। প্রতিটি মানুষ অন্তত তার মনের দিক থেকে রাজা। তবে একসাথে থাকতে থাকতে অনেক সময়ই কিছু না ভালোলাগা জিনিসও ভালো লেগে যায়।
প্রেম শব্দটি অনেক গভীর। মুহূর্তগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে তবেই ভালোলাগা। শুধু ভালোলাগা নয়; তাঁকে ভালোবাসা-যত্ন করা-শ্রদ্ধা করা-সেবা করা পরিশেষে বিশ্বাস। তার চেয়েও নিজেকে বিশ্বাস; হ্যাঁ আত্মবিশ্বাস। যেখানেই থাকো, যে পরিস্থিতিতেই থাকো; আমি আছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি; তোমার কাজকে সম্মান করি; তোমাকে শ্রদ্ধা করি। তোমার ভাল চাই। তোমার সব কিছুতেই আমি তোমার পাশে আছি।
হিংসা-প্রতিযোগিতা-অহংকার প্রেমকে নিয়ে যায় অন্ধকারে; মুছে যায় তখন বন্ধুত্ব, ভালোবাসা বা দাম্পত্য জীবন বরং একটা শক্ত মুঠো হাতের মুঠো অনেক কিছুই বুঝিয়ে দেয়; সেই স্পর্শ যেন বলে, “আমি আছি, আমি আছি তো।” ব্যাস তখন আর কিচ্ছু চায় না এই মন। তখন কি মনে হয় না ” আমি তোমার ” এই কথাটি বলার আর কোনো প্রয়োজন আছে ?

ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি যার অনুভূতি পৃথিবীর যে কোনো অনুভূতির চেয়ে আলাদা। ভালোবাসা দিয়েই একজনকে নিজের করা যায়। সম্পর্কের মধ্যে যদি প্রেম না থাকে তবে সে সম্পর্কের কোনও অর্থই হয় না। প্রেম প্রতিটি সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে প্রেম থাকবে না, সেখানে সুখ নেই, সেখানে থাকে না শান্তির বাতাবরণ। মনের এই সুখ বা শান্তি আমাদের মানসিক চাপকে অনেকটাই নির্মূল করে দেয়। একাকীত্বের অনুভব অনেকের জীবনকে কষ্টে ভরে তোলে। তাই একাকীত্ব থেকে মুক্ত ব্যক্তি সহজেই জীবনে সাফল্য অর্জন করে।
প্রেমের ভিত্তিতে যে সম্পর্ক তৈরি হয় তার অনুভূতিই আলাদা, সেই আনন্দ কাউকেই বোঝানো যায় না, সেই অনুভূতির কোনো ব্যাখ্যা হয় না। এই সম্পর্ক অত্যন্ত মূল্যবান। এমন পরিস্থিতিতে যখন লোভ-লালসা সম্পর্কের মধ্যে একটু একটু করে জায়গা করে নেয়, তখনই সম্পর্কের সৌন্দর্য, সম্পর্কের অনুভূতি কোথায় যেন হারিয়ে যায়। নষ্ট হয় যায় তার আবেগ। অতএব, যেখানে প্রেম আছে সেখানে লোভ থাকবে না। যদি লোভ থাকে তাহলে সেটি প্রেম নয় ।
প্রেমে বিশ্বাস হলো আসল সম্পদ। এই সম্পদ যেন সারাজীবন ঠিক থাকে, কোনো অবস্থাতেই যেন ভেঙে না যায়। ভালবাসার পবিত্র সম্পর্ক বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। বিশ্বাসের অভাব দেখা দিলে প্রেম অদৃশ্য হতে শুরু করে। এই পরিস্থিতি কখনও সম্পর্কের মধ্যে আসা উচিত নয়। একে অপরের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস হ’ল ভালবাসার প্রথম শর্ত। আর এই বিশ্বাস আনুগত্যের দ্বারা জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং, এই জিনিসটি কখনই সম্পর্কে কম পড়তে দেওয়া উচিত নয়।
পাশাপাশি একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শ্রদ্ধা যখন কমতে শুরু করে তখন ভালবাসাও কোথায় যেন ম্লান হয়ে যায়। প্রতিটি সম্পর্ককে সঠিক মর্যাদা দেওয়া উচিত। প্রেম যত গভীর হয়, সম্পর্কের মর্যাদাও তখন বাড়তে থাকে। একে সবসময়ই যত্ন নেওয়া উচিত। দাম্পত্যে বা প্রতিদিনের যাপনে এই প্রেমের অবদান অপরিসীম।

প্রেম হল ঢেউ এর ওপর ঢেউ; নীল ঢেউ। মোলায়েম, তুলতুলে এক ভালোলাগা; যাকে ওর মতো করে ভাসতে দেওয়া উচিত; কোনো কিছুই চাপিয়ে দিতে নেই।

(চলবে)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মণিজিঞ্জির সান্যাল, বাংলা সাহিত্যে এম.এ., ক্ল্যাসিক্যাল নৃত্য প্রভাকর; জন্মদিন: ২৯শে বৈশাখ, ইং ১৩ই মে; জন্মস্থান: ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি। যে সব পত্র পত্রিকায় লিখেছেন: আনন্দবাজার, দেশ, সানন্দা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, শিলাদিত্য, যুগ শঙ্খ, নন্দন, তথ্যকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকা, উত্তরের সারাদিন, স্টেটসম্যান, অন্যদিন পত্রিকা (বাংলাদেশ), এছাড়া অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বাইরে কুয়েত, বাংলাদেশ, কানাডা, লন্ডন এমন অনেক বিদেশের পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বই: (১) একটুকু ছোঁয়া লাগে (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (২) স্বপ্নের পৃথিবী (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৩) অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে (৪) সমুদ্র তোমার সঙ্গে (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৫) সম্পর্কের পরিচর্যা (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৬) কমলালেবুর রস নোনতা (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৭) ভালোবাসার গোপন দরজা (৮) মাটির কাছাকাছি
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!