অনুগল্প: ভুলের মাশুল

পীযূষ কান্তি সরকার
পীযূষ কান্তি সরকার
2 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

প্রায় মিনিট পঁচিশ দেরিতে রামপুরহাট – হাওড়া এক্সপ্রেস বোলপুর স্টেশনে এসে পৌঁছালো, তখন সন্ধ্যা ছ’টা বেজে তিরিশ মিনিট।সংরক্ষিত ডি-টু কামরায় উঠে এলেন সুসজ্জিতা মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা, কাঁধে ঝোলানো সুদৃশ্য লেদার – ব্যাগ, পায়ে ইঞ্চি তিনেকের পেনসিল হিল যুক্ত স্যাণ্ডেল। সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ একজন পুরুষ সঙ্গী। কামরার সিট নম্বরে নজর পড়তেই তিনি বলে উঠলেন, ‘ওই দ্যাখো, আমাদের সিট জানলার ধারে কিন্তু ওই বুড়োটা তোমার সিট দখল করে বসে আছে যে! এই যে সরে বসুন, আমায় বসতে দিন। ‘মহিলা জানলার ধারের সিট দখল করে তাঁর সঙ্গীকে ডাক দিলেন, ‘কই এসো! এই সিটটা তো তোমার! দাঁড়িয়ে রইলে কেন?’
ঘটনার আকস্মিকতায় ওই বারোটি সিটের সকল যাত্রীই বেশ হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। জানলার কাছে বসা বৃদ্ধ ভদ্রলোকের ছোটো জামাই প্রসূন বলে উঠল, ‘আমাদের রিজার্ড সিট — আপনারা কেন বসতে চাইছেন, বুঝতে পারছি না?’
ভদ্রমহিলা চোখ পাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘শ্যাওড়াফুলি থেকে একমাস আগে রিজার্ভ করা আমাদের টিকেট – বুঝেছেন!’ তারপর নিজের সঙ্গীর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এই যে – তোমার কাছেই তো টিকেট রয়েছে, দেখিয়ে দাও না!’
ভদ্রলোক তাঁর ব্যাগ থেকে টিকেটটি বের করলেন। প্রথমটায় তো প্রসূন অবাক – কামরা ডি-টু, সিট নম্বরও জানলার পাশেই, তাহলে! ঠিক তারপরই ধরা পড়লো ভুলটা কোথায়? আসলে সন্ধ্যা ছ’টায় বোলপুর স্টেশনে ঢোকার কথা ‘গণদেবতা এক্সপ্রেস’- এর, সেই সময় লেট করে এসে ঢুকেছে ‘রামপুরহাট এক্সপ্রেস।’
প্রসূন বলল, ‘এ-গাড়ি তো কড লাইন ধরে যাবে — বলরামপুর – ডানকুনি হয়ে। আপনাদের ‘গণদেবতা’ পিছনে আসছে। সেটিই যাবে মেন লাইনে, আপনাদের ‘শ্যাওড়াফুলি জংশন’- এ নামিয়ে দিয়ে যাবে।’
ভদ্রহিলা সিট ছেড়ে এগিয়ে এলেন। তাঁর বাক্যবাণের অভিমুখ ঘুরে গেল তাঁরই পুরুষ সঙ্গীর দিকে, ‘এই লোকটাই হল যতো নষ্টের গোড়া! কানে ভালো করে ঘোষণাটা না- শুনেই উঠে পড়লো ট্রেন। নাও এবার পরের স্টেশনে নেমে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকো! রিয়েলি অ্যা ননসেন্স ইউ আর!’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া শহরের ব্যাঁটরা থানা এলাকায় পীযূষ কান্তি সরকারের জন্ম ১৩৬৮ সালের ১৩ই বৈশাখ ( ২৭ এপ্রিল ১৯৬১ )। হাওড়ার কদমতলায় সাতপুরুষের ভিটে। বাবা রতন সরকার, মা বেবি সরকার-- উভয়েই প্রয়াত। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ডিপ্লোমা প্রাপ্ত সাহিত্যিক নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ঞ মিশনের আইটিআই-এর শিক্ষক। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা কবিতা,গল্প, নিবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২টি কবিতার বই -- 'জীবনের জানলায়' ও 'আলোর কলম' প্রকাশিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!