আলো অন্ধকারে যাই (পর্ব ২)

গৌতম রায়
গৌতম রায়
10 মিনিটে পড়ুন
ছবি প্রতীকী

আমরা যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র, তখন আমাদের থেকে বয়স ও আকার আকৃতিতে বড়োসড়ো একজন ছাত্র আমাদের ক্লাসে পড়তো। ওর নাম ছিল গফুর। লম্বা, ঢ্যাঙা গফুর আগেও এই ক্লাসেই ছিল। পড়া পারতো না। প্রায় প্রতিটি ক্লাসেই স্যারদের বকাঝকা শুনতে হতো তাকে। এছাড়া নি ডাউন হওয়া, দাঁড়িয়ে থাকা বা বেঞ্চির উপরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকাটাও ওর জন্যে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল একটা। অনেক সময় স্যার/আপারা ধরেই নিতেন – গফুরকে পড়া ধরা না ধরা একই কথা; তাই তাকে অব্যাহতি দেয়া হতো মাঝে সাঝে। তবে গফুর নিয়মিত ক্লাসে আসতো। পড়া না পারাকে কেন্দ্র করে তার মার খাওয়াটি এতই প্রাত্যহিক ব্যাপার ছিল যে ক্লাস চলছে অথচ গফুর মারধর খাচ্ছেনা বা বকাঝকা শুনছে না এরকমটি হলে খুবই অস্বাভাবিক লাগতো।

বছর শেষে প্রমোশন পেয়ে আমরা যখন চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলাম, গফুর ঐতিহ্য টিকিয়ে তখন তৃতীয় শ্রেণিতেই রয়ে গেলো এবং পড়া না পারার জন্যে যথারীতি আগের মতোই মার খেতে লাগলো। একদিন জলি আপা ওকে এমন পিটুনি দিলেন যে আমরা পাশের ক্লাস থেকে তা দেখে ভয়ে একাকার। আপার একই কথা – গফুরের কেন লজ্জা করেনা একই ক্লাসে বারবার থাকতে! গফুর এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি। শুধু শরীরটাকে আকাবাঁকা করে কুঁকড়ে গিয়ে মার খেয়েছে, আর বারবার আকুতি জানিয়েছে তাকে আর না মারতে। আপার বোধ হয় সেদিন রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিলো। মনের সুখে তিনি গফুরকে পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে হাঁপিয়ে ক্লাস ছাড়লেন। আগেই বলেছি – আমাদের স্কুলে সেই সময় কোনো পার্টিশন ছিল না, তাই সমস্ত ছেলেমেয়েরা একদম চুপ। গফুর ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায় কাঁদতে কাঁদতে। কয়েকদিন পরে গফুর ক্লাসে এলে আবার যথারীতি জলি আপা পড়া জিজ্ঞেস করলে গফুর একই কায়দায় মাথা নিচু করে থাকে। উদ্যত হয় আপার বেত। গফুর অনেক সাহস নিয়ে বলে, “আপা, আমার একটি কথা শোনেন, আমার আব্বা আমার জন্যে মাস্টের ঠিক করিছে। আজকেরতে আসবি। আপা, কালকেরতে আমি পড়া পারবো। আপা, দেখেন আমি কালকে পড়া পারবানে।”

আপার বেত থেমে যায়। রণমূর্তির জলি আপা গফুর কি বলতে চাইছে সেটি প্রশ্ন করে বুঝে নিয়ে হেসে ফেলেন। এটি একটি অবিশ্বাস্য প্রলাপ! সমস্ত স্কুল হেসে ফেলে আপার সাথে। পরদিন, গফুর সত্যি সত্যিই জলি আপার ক্লাসে পড়া পেরে যায়। গফুরের সে কি বিজয়ীর হাসি! উঁচু দাঁতগুলি বের করে গফুর যখন হাসছিলো পড়া পারার আনন্দে, সেটি শুধু গফুরের আনন্দ ছিলোনা। সেই আনন্দ আমাদের মাঝেও সংক্রমিত হয়েছিল। জলি আপা অবাক! সেবারই গফুর তৃতীয় বা চতুর্থ বারের চেষ্টায় ক্লাস ফোর এ উঠলো। গফুর পরে ক্লাস ফাইভ পাস করে টেইলারিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিল।

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, গফুরকে দিয়ে একটা প্যান্ট বানিয়েছিলাম। বয়সে বড় হলেও সহপাঠী তো! গফুর কথা দিয়েছিলো ভালো করে বানিয়ে দেবে। মাগুরা থানার সামনে একটা ছোট দোকানে গফুর টেইলারিং এর কাজ করতো। দোকানের নামটা ভুলে গেছি। পাশেই ছিল দীপঙ্করদের ওষুধের দোকান। প্যান্ট বানাবার জন্যে যেদিন গফুরের দোকানে গেলাম, সে খুব খুশি হলো। যত্ন করে বসালো। হেসে হেসে বেশ কথা বললো। চা খাওয়ানোর চেষ্টা করলো। বাসায় এসে প্যান্ট পরে দেখলাম, বন্ধু গফুর ছাত্র হিসেবে তার ঐতিহ্য বজায় রাখতে পেরেছে। কয়েকবারের চেষ্টায় প্যান্টটা ঠিক করতে না পেরে গফুরের মুখে বিব্রত হাসি। আমার সান্ত্বনা – তবুও সহপাঠীর কাছেই তো গিয়েছিলাম।

দ্বিতীয় ঘটনাটি আমার বন্ধু রমেশকে নিয়ে। রমেশ আমার ঘনিষ্ট বন্ধু সেই দিনগুলিতে। ছোটোখাটো রমেশের অনেক বুদ্ধি। সে ভালো ছাত্র। ক্লাস থ্রি থেকে সে ডবল প্রমোশন পেয়ে ক্লাস ফাইভে উঠেছে। আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইশকুলে যাবার পথে রমেশদের বাড়ি। আমি আগে রমেশদের বাড়ি যেতাম, তারপর রমেশ, আমি আর মাঝে মাঝে তপু একসাথে ইশকুলে যেতাম। ফিরতামও একসাথে। তবে আমাদের মাঝে প্রায়ই আড়ি নেয়ার প্রচলন ছিল – বিশেষত রমেশ আর তপু এবং তপু আর আমার মাঝে। কনিষ্ঠা আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে আড়ি নিয়ে কয়েকদিন যেত, তারপর আবার বুড়ো আঙ্গুল স্পর্শ করে ভাব হতো। রমেশ আর তপুর বাড়িতে এমন অবাধ যাতায়াত ছিল যে মনেই হতোনা ওরা দূরের কেউ। আজকাল তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর কোনো ছাত্রের কাছে সে যতই মফস্বল এলাকার হোক না কোনো, এভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে একাকী এক বন্ধুর বাড়ি, সেখান থেকে আরেক বন্ধুর বাড়ি হয়ে স্কুলে যাবার কথা হয়তো রূপকথা মনে হবে।

যাহোক, আমি বরাবরই অংকে খুব কাঁচা ছিলাম। সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণীতে ষান্মাসিক পরীক্ষায় আমি ডবল জিরো পাই। খাতা পেয়ে আমার হাত-পা পেটের মাঝে ঢুকে যাবার অবস্থা। ছুটির পরে রমেশকে বললাম আমার বিপদের কথা। রমেশেরও মন খারাপ। কারণ সে ডবল প্রমোশন পাওয়া ছাত্র কিন্তু গণিতে তার অবস্থা ভালো না। সে পাশ করেছে তবে কম নম্বর পেয়েছে। আমার দুরবস্থা দেখে রমেশ আমাকে সান্ত্বনা দেয় যে ভয়ের কিছু নেই। একটা পথ সে বের করে ফেলবে। সেদিন তাপসকে কি সব বলে যেন রমেশ ভাগিয়ে দেয়। তারপর আমাকে নিয়ে সে রওনা হয়। কোথায় যাচ্ছি কিছুই জানিনা। সে সময় আমার দৌড় – বাসা থেকে রমেশ – তপুদের বাসা হয়ে স্কুল, আর স্কুল থেকে বাসায় ফেরা পর্যন্ত। রমেশ আমাকে নিয়ে কোন কোন পথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে গেলো সাধনা ঔষধালয়ের সামনে।
মাগুরার সাধনা ঔষধালয়ের সেই ভবনটি ওই সময় খুব আকর্ষণীয় ছিল। লাল রং এর একটি দোতলা ভবনের উপরে সিমেন্ট এর অনেক বড় বড় সাদা হরফে লেখা সাধনা ঔষধালয়। সেই ভবনটি আর তার লেখাগুলি আজও বিদ্যমান। সত্তরের দশকে একটি ছিমছাম মহকুমা শহরে এই ভবনটির একটি আলাদা ব্যঞ্জনা ছিলো। সাধনার পাশেই ছিল এক সাইকেল মেকানিকের দোকান। সেখানে গিয়ে কি সব বলে তাদের কাছ থেকে এক টুকরা সাইকেলের টিউব ম্যানেজ করে রমেশ। বাইরে তখন টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি। ওই সাইকেল সারাইয়ের দোকানে বসে বসেই সে আমার ও তার খাতার নম্বর সব ঘষে ঘষে উঠিয়ে সেখানে ইচ্ছেমতো নম্বর বসিয়ে দেয়। তার নিজের নম্বর ৭০/৮০ এর ঘরে; আমার ৫০ এর উপর, সম্ভবত ৫৭। এরপর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দুই বন্ধুর বাসায় ফেরা। রমেশ আমাকে অনেক বুদ্ধি-পরামর্শ আর সাহস দিয়ে দেয় এবং বারবার বলে দেয় আমি যেন কিছুতেই না বলি আসলে কী হয়েছে।

বাসায় এলাম। প্রথমেই জেরার মুখে পড়লাম – কোনো এতো দেরি হলো। রমেশের কথামতো জানালাম, রমেশের বাসায় ছিলাম। ইশকুল ছুটির পরেও এতো দীর্ঘ সময় রমেশের বাসায় থাকার জন্যে ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’ হলোনা ঠিকই কিন্তু বকাঝকার প্লাবন বয়ে গেলো। ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকার বাইরে আমার আর কিই বা করার ছিল! দিদিরা প্রশ্ন করলেন, পরীক্ষার খাতা দিয়েছে কিনা। জানালাম, হ্যা। খাতা দেখে সবারই চক্ষু চড়ক গাছ। খাতার ভিতরে সব অঙ্কই ভুল কিন্তু সব অংকেই আমি নম্বর পেয়েছি ।

এমনকি আমার প্রাপ্ত মোট নম্বর পঞ্চাশের উপরে। রমেশ শিখিয়ে দিয়েছে কিছুতেই যেন জেরার মুখে সব বলে না দেই। অক্ষরে অক্ষরে পালন করি বন্ধু ও ত্রাতার উপদেশ। এই রহস্যের কোনো সুরাহা না হওয়াতে রাতে বাবা চেম্বার থেকে আসলে সব কিছু তাঁকে জানালেন বড়দি। আমার এখনো মনে আছে, গরমের সময় হারিকেনের আলোতে লাল বড় বারান্দায় সবাই লাইন দিয়ে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। এর মাঝে বড়দি নিবেদন করলেন বিচারক বাবার কাছে যে গৌতমের সব অঙ্কই ভুল কিন্তু সব অংকেই সে নম্বর পেয়েছে। বাবা জানতে চাইলেন, ভুল ত্রুটিগুলি মাইনর কিনা। বড়দির জবাব, না, পুরো অঙ্কই ভুল। বাবার সিদ্ধান্ত পরদিন আমাকে ও অংকের খাতা নিয়ে স্কুলে গিয়ে যেন দেখা হয় কেন এমন হয়েছে। আমার আত্মা তখন খাঁচা ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে।

পরদিন আবার সেই মেজদির সাথে স্কুলে যাওয়া। সারা রাস্তা আমার আর পা চলতে চায় না। স্কুলে গিয়ে দেখা গেলো, স্কুল বন্ধ। সম্ভবত গরমের ছুটি দেয়া হয়েছিল। আহ, কী শান্তি! কী শান্তি! আমাকে নিয়ে ফিরে এলো মেজদি। হাফ ছেড়ে বাঁচি আমি। কারণ স্কুল খোলার পর সেই খাতা নিয়ে যাবার কথা আর কারো মনে পড়েনি। রমেশের বাড়িতে কি হয়েছিল আজ এত দিন পরে আর মনে নেই। যতটা মনে করতে পারি, আমাদের সেই সময়ে ষান্মাসিক পরীক্ষার জন্যে রেজাল্ট কার্ড দেয়া হতো না। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শুধু বার্ষিক পরীক্ষার নম্বর উল্লেখ থাকতো। সেই সাথে কততম স্থান, আর উত্তীর্ণ না অনুত্তীর্ণ, না বিবেচনায় পাশ সেটি। তাই হয়তো এই অপকর্মের বিষয়টি অভিভাবকদের নজরে আসেনি আর। বিষয়টি আমি নিজেই আমার পরিবারের সকলকে জানাই যখন ততদিনে আমি এসএসসি পাস করেছি।

ঘটনা দুটি যখন মনে করি, কিছু প্রশ্ন মনে এসে ভিড় করে:
১. গফুর কেন বছরের পর বছর একই ক্লাসে থাকতো? সে কি শুধুই তার ব্যর্থতা?
২. গফুরকে যেভাবে পেটানো হতো সেটি কতটা মানবিক ছিল?
৩. যে উদ্যম নিয়ে গফুরকে পেটানো হতো তার সিকি ভাগ তো দূরের কথা, এক শতাংশ উৎসাহ নিয়েও কি তাকে শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কেউ? জানা নেই কিন্তু সে তো স্কুলে আসতো শিখতে। শিক্ষার্থীকে শেখানোর কাজটি কি বাড়ির না স্কুলের?
৪. গফুরের তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবার কৃতিত্ব স্কুলের না গৃহ শিক্ষকের?
৫. পরীক্ষা ভীতি সেই সময়েও ছিল। এখনো কি একটুও কমেছে? হাই স্টেক টেস্ট কী রকম বিপদজনক হতে পারে সেটি আমার ও রমেশের কাহিনী সাক্ষ্য দেয়। আমাদের দুজনের শিশুকালীন অপরিপক্কতা ধারাবাহিক মূল্যায়নকে কি জাস্টিফাই করেনা?
৬. অভিভাবকবৃন্দরাও কি শিশুর পরীক্ষা ভীতির একটি বড় কারণ নয়?
৭. উপরে বর্ণিত পরিস্থিতি এতদিনে কতটা পাল্টেছে?
৮. সত্তরের দশকে যে সামাজিক নিরাপত্তার চাঁদরে আমরা বড় হয়েছি, সেটি হারিয়ে গেল কীভাবে ও কেন? দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে এটিও কি বৃদ্ধি পাবার কথা ছিল না?

(চলবে)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: গৌতম রায়
গৌতম রায় ইংরেজির অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেবার পর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেশ তরুণ বয়সেই শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। পড়িয়েছেন দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই পরবর্তীতে ছাত্র হয়েছেন ইংল্যান্ডের এক্সিটার ইউনিভার্সিটির।‌ যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড লার্নিং থেকে নিয়েছেন পেশাগত প্রশিক্ষণ। এখন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের জাতীয় ‌শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে। শিক্ষা বিষয়ক বর্ণিল কাজে নিজেকে ‌সম্পৃক্ত রাখার জন্যই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে গৌতম রায়ের পছন্দের আঙ্গিনা শিক্ষকের অনিঃশেষ পেশাগত দক্ষতা, ইন্টারেক্টিভ মেটিরিয়ালস ডিভ্যালপমেন্ট, ও লার্নিং এসেসমেন্ট।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!