কবি আনসার উল হকের ছ’টি কবিতা

আনসার উল হক
আনসার উল হক
3 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

অন্যস্বর

এই নাও
রেখে গেলাম পুরুষ্ট বীজ।
ছড়িয়ে দাও উত্তরাধুনিকতার গর্ভগৃহে
মুখরিত হোক পুরোহিত, মৌলভী, পাদ্রী
নাভি ফেটে জন্ম নিক
ধর্মের ফুল।
দান-ধ্যান কথা বেচে মৌন ঋষি
দিনের আলোয়,
রাত্তিরে রক্ত ঝরে ঈশ্বরের পৃথিবীতে।
ব্যাঙেরা প্রার্থনা করে-
‘হে ঈশ্বর বৃষ্টি থামাও’
বিধাতা বধির।

কাঁপা জলে মুখ দ্যাখে চাষি-বউ,
পবিত্র দেবদাসী সোনার ফসল ফলায়
ভিজে ক্ষেতে।
আলোর আবাবিল হয়ে
করোটিতে আঘাত ক’রে
পালটে দেয় বোধের জগৎ।

দিনলিপি

অসুখ-বিসুখের দিনলিপি লিখতে লিখতে
ছায়াহীন মুহূর্তগুলো পাখির শিষের মতো উড়ন্ত হয়।
মায়াময় আন্তরিকতা এসে কড়া নাড়ে
যাপিত জীবনের খিল-আঁটা দরজায়।
ভাষাহীন বোধগুলো স্বপ্নলীন কথা হয়ে
পার হয়ে যায় ভালোবাসার নদী।

আমার পাখিজন্মের মহাসমুদ্র তুমি।
প্রণয়বিলাসীর স্রোতে হাবুডুবু খাই
পিয়ালের ঝকঝকে বাগানে,
জ্যোৎস্না কুড়োই আঁচলঘেরা জারুলের বনে।
তোমার আমার মৃদু সংলাপে
সমস্ত পাপ খুঁটে খায় আকাশপরিরা।
মেঘের গর্ভ ছিঁড়ে
মাতাল পূর্ণিমা চাঁদ ভেসে ওঠে
আমাদের এলোমেলো বুকের খাঁচায়।

স্বদেশ ও সরস্বতী

সরস্বতী নতজানু, কাছে নেই কেউ
শরীরে শুয়েছে চাঁদ, লোনাজলে ঢেউ।

পাপ মাখে পুরোহিত মাতাল প্রলাপ
ধ্বস্ত চাতালজুড়ে রেখে গেছে ছাপ।

বর্ষায় কেঁপে ওঠে পাহাড়িয়া গাছ
সারারাত তান্ডব, ভৈরবী নাচ।

গহীন গোপন বুকে কারুকাজ আঁকে
নদীর শরীর খোঁড়ে হৃদয়ের বাঁকে।

ঘন কালো মেঘ ঢাকে আমাদের খুশি
তবুও ঘুমিয়ে কাদা চেনা রাক্ষুসী।

ঠোঁটজুড়ে কাচ-পোকা আলুথালু চুল
স্বাগত কথনে জাগে ভালোবাসা-ফুল।

জামরুল যুবতী শুয়ে ঋতুমতী বেশ
শিবের ত্রিশূল যেন চিরেছে স্বদেশ।

জীবনের দিকে

আমি এখন গান আঁকতে পারি।
কিশোরবেলার প্রেম, সর্পগন্ধা মেয়ে
এমন কি সম্মোহন আঁকতে পারি।

এখন আমার কোনো কষ্ট নেই
গনগনে আঁচে বসে
গান গাই, রুমাল নাড়ি
শেখানো শব্দ নিয়ে ইমারত বানাই
এবার নাকি রোদ ফুটবে,
অরণ্যের খোঁজ করতে গিয়ে
নিজের বাগানটুকু হারিয়ে ফেলি।
এখনো মানুষকে বিশ্বাস করি
কীভাবে এগোতে হয় শিখে নিয়েছি।
আঁধার ছেনে আলো এনেছি
কয়লা থেকে আগুন
স্পর্শ থেকে ভালোবাসা।
অন্ধকার তলিয়ে যায় আলোর গহীনে
আর আমি,
জীবনের দিকে।

মিছিলের মানুষেরা

আর বদ্ধভূমি দেখতে চাই না।
উদ্ধত শিখর থেকে
সুখের পাখিরা এবার নামো
জাগো,
হে শুদ্ধ সাহসের সন্তান-সন্ততি।
ধুলোমাখা গান গাও,
সবুজের ছোঁয়া দাও
কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে,
ফুল ফুটবে প্রতিটি গাছে।

জীবনকে রেখে যাব যাপনের ভাঁজে।
পৃথিবীর সমস্ত পথ
সুর হয়ে ভেসে যাবে
অসম্ভব সুন্দরের দিকে।
আর,
আমরা পৌঁছে যাব নতুন প্রজন্মের কাছে।
মিছিলের মানুষেরা খুঁজে পাবে
তাদের প্রিয় ঘর, নতুন পৃথিবী
আর ঝকঝকে সকাল।

বিষ-পাথরের প্রতিকৃতি

বিপ্রতীপে টলতে টলতে
আর কতদূর এগোবে!
মাতাল কোজাগর এখনও চেটে খায়
তোমার বে-আব্রু পটভূমি।
কিশোর যুবতী তুমি
হারিয়ে যাও অকপটে যখন তখন
মন্দিরে মসজিদে গির্জায়
কিংবা দরগা মাজারে।

নিত্যদিন পাথর ভাঙ বুকের ভিতর
তবুও রাত্তির নামে গনগনে দুপুরে-
অজান্তে ছায়ার মতন।
তোমার অসতর্ক ভাবনাগুলো
মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে ধানের শীষে
অগোছালো দুধের মতন।

নগরকীর্তনে গুলজার হও তুমি
বত্রিশ ভূতে ছিঁড়ে খায়
তোমার সাধের শরীর
তুমি নির্বাক,
বিষ-পাথরের প্রতিকৃতি।

আগুন খেয়েছ এতকাল
এবার বরং বোধের গর্ভগৃহে-
মানুষের চৈতন্যে মিশে যাও
আঁধার কেটে আলো নামুক
আমাদের মননে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
আনসার উল হক: জন্ম ৩ জানুয়ারি, ১৯৫৪। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ডহারবার মহকুমার কুন্ডে গ্রামে। মূলত কবি ও বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫। এর মধ্যে আছে কবিতা, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, জীবনী, রসিকতা, সম্পাদিত গ্রন্থ ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : চিরন্তন, দ্য কোটেস্ট (ইংরাজি বাংলা) ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য ছড়াগ্রন্থ : ডটকম ছাড়িয়ে, আইকম বাইকম, কু ঝিকঝিক রেলের গাড়ি, তেপান্তরে চাঁদের বুড়ি, ভাত বেড়েছি সোনার থালায়, ইচ্ছেকথা, আমার রবীন্দ্রনাথ, প্রিয় ২৫ ছড়া ইত্যাদি মোট ১২ টি। শিশু কিশোর সাহিত্য সংগঠন নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য সংসদ-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক। সম্পাদনা করেন "আলোর ফুলকি" পত্রিকা। পেয়েছেন সুকুমার রায় স্মৃতি পুরস্কার, মাইকেল, রেনেসাঁ, অজগর, চয়ন সাহিত্য পুরস্কারসহ নানান পুরস্কার ও সংবর্ধনা।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!