প্রস্তাবিত তামাক কর তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

ম মাসুদ হোসেন খান
ম মাসুদ হোসেন খান
6 মিনিটে পড়ুন
বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা ভয়েস আয়োজিত তামাক পণ্যে আরোপিত কর বিষয়ে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং, ১০ই জুন ২০২১

প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কোম্পানীকে অগ্রাধিকার এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে বেসরকারী মানবাধিকার ও গবেষণা সংস্থা ভয়েস আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা মতামত দেন

গত ৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ৭ টাকা বৃদ্ধি করা হলেও নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম ও শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এই পদক্ষেপ তরুণ ও দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার (১০ জুন, ২০২১) বেসরকারী মানবাধিকার ও গবেষণা সংস্থা ভয়েস আয়োজিত “তামাক কর বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর প্রতিক্রিয়া” শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ মতামত দেন।

সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “খুব নগণ্য হলেও তামাক কোম্পানীতে সরকারি মালিকানা বা শেয়ার আছে। যার কারনে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বোঝাপড়া তৈরী হয় এবং তামাক কোম্পানীগুলো তাদের অশুভ চক্র কাজে লাগিয়ে সুবিধা ভোগ করে। এ কারণে প্রতিবার বাজেটে তামাক কর নিয়ে আমরা হতাশ হই”।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট যদিও চূড়ান্ত না তবুও এর পরে সংশোধনের সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন তামাক কর বৃদ্ধি করতে হলে ভবিষ্যতে তামাক বিরোধী সংগঠন গুলোর কৌশল বদলাতে হবে। পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আইন সংশোধনের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে আলোচনার জায়গা বৃদ্ধি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভয়েসের প্রকল্প সমন্বয়কারী জায়েদ সিদ্দিকী। প্রবন্ধে প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবার আশংকা করা হয়। প্রবন্ধে উঠে আসে বাজারে ৮৪ শতাংশ সিগারেট নিম্ন ও মধ্যম মানের হলেও সেগুলোর ওপর কর বৃদ্ধি করা হয়নি। অন্যদিকে, এসব সিগারেটের মূল ভোক্তা হচ্ছে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

বিশ্বে সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম দিকে এবং ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকে আসক্ত। প্রতি বছর ১ লক্ষ্য ৬১ হাজার মানুষ তামাক জনিত রোগে প্রাণ হারায় এবং অনেকে অকালে পঙ্গু হয়ে যান। করোনা মহামারী আক্রান্ত পৃথিবীতে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য ক্ষতি কমানোর উদ্দেশ্যে তামাকের বহুস্তরভিত্তিক ব্যবস্থা লোপ করা থেকে শুরু করে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের কর আরোপের দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে নেই তার প্রতিফলন।

এবারের বাজেটে উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে প্রতিশলাকা সিগারেটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে মাত্র ৫০ ও ৭০ পয়সা। এই পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য যা তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তামাকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যর্থ হবে। এর পাশাপাশি সিগারেটের বহুস্তর ভিত্তিক ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় ভোক্তা হিসেবে স্তর পরিবর্তনের সুযোগও বহাল থাকছে। এমন পদক্ষেপ তরুণ ও দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য বিশাল ক্ষতির কারন হতে পারে বলে সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কেননা নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বহন করার ক্ষমতা থাকে না।

প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রধান হাসান শাহরিয়ার বলেন, “সাধারণত বাজেটের সময় এমনভাবে কর ধার্য করা হয় যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি চাপ কম হয়। কিন্তু বিড়ি সিগারেটের মত ক্ষতিকর পণ্যের জন্য নিয়ম প্রযোজ্য নয়। বরং ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার কমাতে ধনী এবং দরিদ্র্য সবার জন্য সমান কর আরোপ করা উচিত। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন ও মধ্য স্তরের সিগারেটের মূল্য ও শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে ছাড় দেয়ার একটা প্রবণতা দেখা গেছে”।

বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্বাস উদ্দিন নয়ন বলেন, প্রতি বছর কর বৃদ্ধি না করে দাম বৃদ্ধি করার কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না বলে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি জানান এই অর্থ বছরে বাজেটে সকলের কমে যাওয়া আয়ের কথা চিন্তা করে সব পণ্যেই কর নামমাত্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে মহামারীর সময়ে সিগারেটের মত ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার কমেনি বরং বেড়েছে সেখানে এমন বাজেটে পণ্যের বিক্রির পাশাপাশি লভ্যাংশও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান। তিনি তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের বিষয়ে জোর দেয়ার কথা বলেন। 

বিশিষ্ট সাংবাদিক এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরন দীর্ঘদিন থেকে তামাক বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। তিনি বলেন, “করোনা মহামারীর মধ্যে যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনার ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি তখন এই প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত তামাক করে তামাক কোম্পানীগুলোর প্রতি পক্ষপাতিত্ব হয়েছে এবং দরিদ্র্ জনগোষ্ঠী উপেক্ষিত হয়েছে যা দুঃখজনক এবং হতাশাব্যাঞ্জক।“

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর গ্র্যান্ট ম্যানেজার মনে করিয়ে দেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাক মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। প্রস্তাবিত বাজেট তার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

আমাদের অর্থনীতির নির্বাহী সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, শুধুমাত্র তামাকের ওপর কর আরোপ করলেই হবে না, তামাক ব্যবসার সাথে জড়িত কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের পনুর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর প্রধান পলিসি এডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই বছর তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো খুব জোরালোভাবে কাজ করেছে এবং তাদের বার্তা জনসাধারণ পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে। তিনি বলেন, “যদিও আমরা এবছর রাষ্ট্রযন্ত্রের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি। তবুও আমাদের থেমে গেলে চলবে না। আমাদের কাজ করে যেতে হবে। সফলতা একদিন আসবেই”। ঢাকা আহসানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান ইকবাল মাসুদও ভবিষ্যতে সফল হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।

ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদের পরিচালনায় এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা আহসানিয়া মিশন, প্রজ্ঞা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, উন্নয়ন সমন্বয় এবং ডর্পের মত সংগঠন। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ সম্মেলনে আরো উপস্থির ছিলেন, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ, সমকালের সহকারী সম্পাদক শেখ রোকন, যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা, কালের কন্ঠের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার তৌফিক মারুফ এবং আমাদের অর্থনীতির নির্বাহী সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!