অসম্পূর্ণ স্বাধীনতা

অতিথি লেখক
অতিথি লেখক
4 মিনিটে পড়ুন

– লেখক সোনিয়া তাসনিম খান
আলোচনা সভার মঞ্চের পেছনে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো রয়েছে। তাতে জ্বলজ্বল করছে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা স্বাধীনতার লাল সূর্যের প্রতিচ্ছবি। আজ মহান বিজয় দিবস। মুক্তিযোদ্ধা আহসান চৌধুরী প্রধাণ অতিথির আসন অলংকৃত করে রয়েছেন। বিস্তৃত মঞ্চের ওপারে রয়েছে অসংখ্য দর্শক, সাংবাদিক আরও অনেক গণমাধ্যম কর্মী। কেউ ক্যামেরা হাতে কেউ বা কাগজ কলম নিয়ে বসে রয়েছেন। সবার উৎসুক দৃষ্টি ঠিকরে পড়ছে মাইক সামনে থাকা বক্তার দিকে। যিনি ইতিমধ্যে তার বক্তব্য শুরু করেছেন – স্বাধীনতা! লাখো শহীদের রক্ত আর মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। এ দেশের মাটির প্রতিটি বিন্দুতে মিশে রয়েছে শহীদদের পবিত্র রক্ত বিন্দু… বক্তা তার বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে যাচ্ছেন আরও অনেক কিছু। আসনে বসে থাকা আহসান চৌধুরী কথাগুলো ঠিক যেন শুনতে পাচ্ছিলেন না। ওনার দৃষ্টি সামনের টেবিলের ওপর। সেখানে সুসজ্জিত ফুলের স্তবকের ওপর কতগুলো মাছি ইতঃস্তত করে উড়ে বেড়াচ্ছে। তার পাশে রয়েছে এক গ্লাস পানি। উনি তেষ্টা অনুভব করেন। কম্পিত হাতে তুলে নেন গ্লাসটা। এক নিঃশ্বাসে পান করে নেন তা থেকে কিছু জল। পুনরায় ওটাকে টেবিলের ওপর রেখে নেন উনি। গ্লাসটার এখন অর্ধেক ফাঁকা আর অর্ধেক ভরা। একদৃষ্টে তিনি সেদিকে তাকিয়ে থাকেন। একটা প্রশ্ন জাগে মনে ওনার। এই অপূর্ণ গ্লাস খানার মত আমাদের স্বাধীনতাও কি এখন অপূর্ণ নয়? লাখো মা-বোনেরা যাদের সম্ভ্রম খুঁইয়েছেন সেই ‘৭১ এর অভিশপ্ত ক্ষণে। তাদের সেই বলিদান কি আদৌ শেষ হয়েছে এখন পর্যন্ত? আহসান সাহেব বুকে চাপ অনুভব করেন একটু। ওনার টেবিলের ওপর আরও শোভা পাচ্ছে গত দিনের এক পত্রিকা। তাতে বড় করে হেডলাইন এসেছে “গণ ধর্ষণের পর জনৈক মহিলাকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা…” মাথাটা টলে যায় আবারও। স্বাধীন দেশে গণ ধর্ষণ? এসবের জন্য কি সেদিন অস্ত্র তুলে নিয়েছিল এই বজ্র মুষ্ঠি? আমরা কি আসলেই স্বাধীন হতে পেরেছি সত্যিকার ভাবে? পেরেছি কি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা? সেদিন খাঁকি পোশাকের আড়ালে থাকা হানাদারগুলোর চেহারা থেকে স্বাধীন মাটি আঁকড়ে ধরে থাকা আজকের এই মুখোশধারী অমানুষগুলোর মাঝে কি আসলেই কোন পার্থক্য রয়েছে? বর্বর ঐ বাহিনীদের মত এদেরও কি সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে কখনও? চিন্তা ভ্রস্ট হয় আচমকা। সামনে মুর্হুমুর্হু ধ্বনিতে হাত তালি শোনা যাচ্ছে। মাইকে থাকা সেই ভদ্রলোক গলা কাঁপিয়ে বলছেন – এখন আমাদের সামনে স্বাধীনতা নিয়ে আলোকপাত করবেন আমাদের সকলের গর্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আহসান চৌধুরী… কানে যেন কেউ গরম সীসা ঢেলে দিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা! আসলেই কি যুদ্ধ জয় করতে পেরেছেন তিনি? আহসান চৌধুরী ম্লান হাসি হাসেন। চাবি দেওয়া পুতুলের মত দুর্বল পায়ে সেদিকে এগিয়ে যান। ওনার খুব ইচ্ছে হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু উনি পারছেন না। শির উঁচিয়ে চলা বীর মুক্তিযোদ্ধার আজ নিজেকে বড্ড অসহায় বলে মনে হচ্ছে। কি বলবেন উনি? বলার মত কি কিছু আছে? নাহ! স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলবার মত সময় এখনও আসে নি ওনার। আরও অনেক লম্বা পথ যে পাড়ি দেবার বাকি। আড়চোখে গ্লাসটার দিকে আবারও তাকান উনি। আধ পরিমাণ কাক চক্ষু জল স্থির হয়ে রয়েছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল আহসান চৌধুরীর। নাহ! কোন ভুল নেই। যুদ্ধ এখনও শেষ হয় নি। লড়াই এখনও বাকি। ঐ আধা শূণ্য গ্লাসটার মত আমাদের স্বাধীনতার অর্থটা যে এখনও অসম্পূর্ণ।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
সাময়িকীর অতিথি লেখক একাউন্ট। ইমেইল মাধ্যমে প্রাপ্ত লেখাসমূহ অতিথি লেখক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!