বিশ্বের সংক্ষিপ্ততম পত্র

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
3 মিনিটে পড়ুন
ভিক্টর-মারি হুগো

বেশ কয়েকটি প্রকাশনার টেবিলে টেবিলে ঘুরে অবশেষে ‘লা মিজারেবল’ পাণ্ডুলিপিটির একটা প্রকাশক পাওয়া গেল। প্রকাশক উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বললেন, এটা অসামান্য একটি উপন্যাস। আমরা ছাপব। তবে একটাই শর্ত, বইটি যে দিন বেরোবে, আপনাকে সে দিন উপস্থিত থাকতে হবে। যাঁরা আপনার বইটি কিনবেন, আপনি তাঁদের হাতে সরাসরি বইটি তুলে দেবেন। কেউ আবদার করলে, অটোগ্রাফ দেবেন। বইটি সম্পর্কে কেউ কোনও প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেবেন।

হাসি মুখে রাজি হয়ে গেলেন লেখক। সেই মতো বই বেরোনোর অনেক আগে থেকেই প্রায় সমস্ত প্রথম শ্রেণির পত্রপত্রিকায় ঘটা করে বিজ্ঞাপনও দিল সেই প্রকাশন সংস্থা। কিন্তু যে দিন বইটি বেরোবে, সে দিন নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও লেখকের দেখা পাওয়া গেল না। প্রকাশক মহাশয় পড়লেন মহা ফাঁপরে। এ দিকে এক-আধ জন করে ক্রেতারাও আসতে শুরু করে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে একটি চিঠি লিখে তাঁর সংস্থার এক কর্মচারীকে পাঠালেন সেই লেখকের বাড়িতে।

কর্মচারীটি গিয়ে দেখলেন, লেখক বাড়িতে নেই। দরজায় তালা ঝুলছে। আশপাশের লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, তিনি তাঁর বউকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেছেন। সেখান থেকে সমুদ্র খুব একটা দূরে নয়, তাই কর্মচারীটি হন্তদন্ত হয়ে ছুটলেন সেখানে। সমুদ্র সৈকতে তখন প্রচুর লোক। তবু খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলেন তাঁকে। দেখলেন, সমুদ্রের পাড়ে পাশাপাশি বসে আছেন সেই লেখক আর তাঁর বউ। এক মনে সমুদ্রের ভেঙে ভেঙে পড়া ঢেউগুলো দেখছেন। দেখছেন বহু দূর থেকে কী ভাবে আস্তে আস্তে এ দিক থেকে ও দিকে চলে যাচ্ছে পালতোলা জাহাজ। সমুদ্রের বুকে তখনও ডানা মেলে ভেসে বেড়াচ্ছে কতগুলো পাখি। উনি একদৃষ্টে পরখ করছেন পৃথিবীর সেই অপরূপ সৌন্দর্য।

তড়িঘড়ি করে লেখকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন কর্মচারীটি। তাঁকে দেখে লেখক মুখ তুলে তাকাতেই, মনিবের পাঠানো খামটি সঙ্গে সঙ্গে তিনি তুলে দিলেন তাঁর হাতে। খামটি খুলে লেখক দেখলেন, তাতে প্রায় কিছুই লেখা নেই। এ ফোর সাইজের একটা সাদা পাতার মাঝখানে কেবল ইয়া বড় একটা ‘জিজ্ঞাসা চিহ্ন’। সেটা দেখে এক মুহূর্ত তিনি কী একটা ভাবলেন, তার পরেই ওই কর্মচারীটির কাছ থেকে একটা কলম চেয়ে নিয়ে ওই পাতাটিরই পিছন দিকে তিনি লিখে দিলেন তাঁর বয়ান। কর্মচারীটি ওই পত্রটি নিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে এসে তুলে দিলেন মনিবের হাতে।

প্রকাশক মহাশয় ওটা খুলে দেখলেন, তাঁর চিঠিরই উল্টো পিঠে, তাঁর লেখা জিজ্ঞাসা চিহ্নের চেয়েও বড় মাপের, প্রায় পুরো পাতা জুড়ে শুধু একটা ‘বিস্ময় চিহ্ন’ লেখা।
পরবর্তীকালে পত্র গবেষকেরা এই চিঠি দু’টির মর্মার্থ উদ্ধার করেছেন। তাঁদের মত অনুযায়ী, প্রকাশকের লেখা কাগজের প্রথম পত্র ‘জিজ্ঞাসা চিহ্ন’টির মানে— ‘কী, আপনি কি আসবেন না?’ আর লেখকের লেখা দ্বিতীয় চিঠি ‘বিস্ময় চিহ্ন’টির মানে— ‘বইটি বিক্রি হচ্ছে তো?’

এখন পর্যন্ত এই চিঠি দুটিকেই বলা হয়— বিশ্বের সংক্ষিপ্ততম পত্র। একই কাগজের দু’পিঠে লেখা দুই পত্র লেখকের একজন ছিলেন একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার তৎকালীন কর্ণধার এবং অন্য জন ছিলেন ফরাসি সাহিত্যের জাতীয় কবি, রোমান্সের প্রবর্তক, ঔপন্যাসিক ও স্বনামধন্য নাট্যকার— ভিক্টর হুগো।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!