ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখি

আশীষ কুমার চক্রবর্তী
আশীষ কুমার চক্রবর্তী
4 মিনিটে পড়ুন

চন্দ্রগ্রহণের সময় বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে অনুষ্ঠান করে থাকে। প্রায় প্রতি চন্দ্রগ্রহণের সময়। আকাশের লুব্ধক তারা। তার সোজা সুজি লম্বা রেখাটা টানলে সপ্তর্ষি মন্ডল। পরিচয় করায় এগুলো বাচ্চাদের। আর এই উৎসাহ নিয়েই দেখছিলাম, জাহাজের উপর থেকে। গন্তব্য আন্দামান। সঙ্গে তুষার। সহকর্মী। ওর জোরাজোরিতেই একপিঠ জাহাজে। এমন সময় সাইরেনের আওয়াজ ।
সবাই ডেক থেকে নেমে আসুন। ঝড়ের পূর্বাভাস। একটা কালো মেঘ অনেক আগে থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। নেমে আসতে না আসতেই ঝড় শুরু। রাত প্রায় আটটার সময়
শুরু হলো তান্ডব। কিন্তু একি এ যে মারাত্মক।
দরজা দড়াম করে খুলে গেল। দরজার বাইরে এলাম। এক অফিসারের সঙ্গে মুখোমুখি।
কিচ্ছু ঘাবড়াবেন না। মুহূর্তে একটা ধাক্কা। পিঠ সোজা গিয়ে লাগলো ঘরের দেওয়ালে।
তৎক্ষনাৎ উল্টো ধাক্কায় দরজা পেরিয়ে সামনের রেলিঙে।লাইটটা কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ। পাশ দিয়ে একটা লোক যাচ্ছিল ।মনে হয় খালাসি। ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। মোমবাতি জ্বালাতে পারলাম না। হাত দুটো একসাথে হলো না। দু’হাতের আঙুল জড়িয়ে প্রার্থনা। তাও মোটামুটি নেচে নেচে।

একটু পরে মনটা কেমন যেন ” শরৎচন্দ্র , শরৎচন্দ্র ” ভর করলো । হ্যাঁ, ওই বার্মা যাওয়ার সময়, এমনই এক ভয়ংকর প্রকৃতির রূপ দর্শন করেছিলেন জেদাজেদি করায় সবাই পাগল বলে ছেড়ে দিলে। উনি সোজা ডেকে উঠে পোস্ট এ-র সাথে নিজেকে বাঁধলেন ।
সাক্ষাৎ মৃত্যু সবাই ধরে নিয়েছিল।
সত্যিই তো এ সুয়োগ ছেড়ে দেওয়া যায়না ।
আরে কোথায় যাচ্ছিস,আশীষ? বললাম, ডেকের উপর।
ওরে পাগলকে ধর। ধরতে হলো না। সিঁড়ি দিয়ে অল্প জল গড়াচ্ছিল। সবাই দাঁড়িয়ে, আমি পিছলে সোজা নিচে।
শেষ ধাপে। লাগলেও, কিছুই বুঝতে দিলাম না।
কারণ, পাগল বলাতে কেমন একটা তৃপ্তি পেলাম। শরৎচন্দ্র পাগল, নজরুল পাগল। সেসময় লেখক, শিল্পীদের পাগল বলাটা চল ছিল।
তখন নজরুলের লেখায় দেশ জ্বলছে। উনি আরবি, উর্দুতে তুখোড়। ইংরেজরা বহরমপুর জেলে পুরে দিলে। রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে ছাড়া পেলেন।
অনুগামীরা বিশাল সম্বর্ধনার আয়োজন করেছিল। রাতের অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে সোজা কুমিল্লায়। একে কি পাগল বলা যায়?
তবে অনেকেই পাগল বলতে ছাড়লো না।
“অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা।”

অর্থ সঙ্কট। নজরুল মহাশয়, একবার ছায়াছবি তে সুর পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। পরিচালক, প্রয়োজক,বেশ কয়েকটি গান কেটে দিলো। ছুটলেন রবি ঠাকুরের কাছে। এর চেয়ে ভালো সুর আমার মাথায় আসে না……চিঠি লিখে দিলেন। কি বলবেন। রবি ঠাকুর খাদে পড়ে গেলেন। বুঝে উঠতে পারলেননা, কতটা খাদ মেশালে নিরেট পাগল থেকে একটা উজ্জ্বল পাগল পাওয়া যাবে। আচ্ছা, ছাগল তো নিরীহ প্রানী। তো, কে এইরূপ “পাগল ছাগল” বিশেষ্য শব্দ তৈরি করেছিল,জানা নেই। তবে নজরুলের গান বাদ দিয়ে ছায়াছবিটি তৈরি হলে, পাগল ছাগলের দেখার উপযোগী হতো, এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

বাজারে আড্ডা। ইদানীং মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে লটারি। সেই লটারির টিকিট কিনলেন একজন । চোখ বুজে দু’চোখে ছোঁয়ালেন। পেছনের মানিব্যাগে পুরে সেটাকে আবার কপালে ঠেকানো। হ্যাঁ, বিপ্লব এসেছে ঐ মেয়েদের পোশাকে। দগদগে লাল লিপস্টিক, আর জ্যামিতিক আকারে পোশাক। লিবিডো যেন লুডো খেলছে।
“শম্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের মর্মর “
”আমি একটু অন্যরকম, একটু আলাদা”- এই মানসিকতা এখন অনেকের মধ্যে। আর এজন্যই যত অসুখ।
পঁচাত্তর ভাগ মানুষ পাগল, বললেন দার্শনিক ফুকাল্ট। পাগলা গারদে ঢুকে বললেন, এদেরকে ছেড়ে দিতে। বরং পঁচিশ ভাগ মানুষের জন্য উপযুক্ত জায়গা দেওয়া।
সেই নকুল পন্ডিত এখন শাসক। হাতে শক্তিশালী ক্যামেরা। বসে আছে বিশাল একটা লাইটহাউসের উপরে। চোখ ট্যাঁড়া,নির্দেশ গুলো শয়তান মার্কা।
এরকম শাসক মানুষকে পাগল বানাতে যথেষ্ট। হ্যাঁ, সেটাই করেছিল জমিদার শাসকটা। ওনার ওই দুবিঘা জমিটা চাই-ই। উপেন পাগল হলো।
“মাটি থেকে ইট হয়,ইট থেকে বাসা……..
বাসা পুরাতন হয়ে ভেঙে যায়।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!