কেমন আছেন নাটোরের প্রসিদ্ধ মুড়ি গ্রামের ব্যবসায়ীরা!

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন
ফাইল ছবি

গ্রামজুড়েই ঝনঝন শব্দ সবসময় সরগরম সদর উপজেলার ছোট্ট গ্রাম গোয়ালদীঘি কৃষ্ণপুর। তবে আলাদা নামেই গ্রামটিকে চিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নাটোরের মানুষ। আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে এর পরিচিতি ‘মুড়ির গ্রাম’ নামে। তবে মহামারি করোনায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মুড়ির গ্রামে। এতে হোঁচট খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে লকডাউনের কারণে প্রায় বন্ধের পথে মুড়ির ব্যবসা।

রাসায়নিক সার কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি উৎপাদন করে গোয়ালদীঘি কৃষ্ণপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ধান সেদ্ধ করে চাল বানিয়ে মুড়ি ভাজেন তারা। ফলে তাদের তৈরি এই মুড়ির চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

রমজান মাসে ইফতারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ মুড়ি। সারা বছরে যে পরিমাণ মুড়ি উৎপাদিত হয়, রমজান মাস এলেই তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, সারা বছর এখানকার মানুষের চাহিদা মেটায় এ গ্রামের মুড়ি। রমজান মাস হওয়ায় এখন দম ফেলার সুযোগ নেই কৃষ্ণপুর গ্রামের শতাধিক পরিবারের।

জানা যায়. আমন, বিনা-৭, হরি ধান, ২৯ ধান, ১৬ ধান, ৫২ ধানের মুড়ি উৎপাদিত হয় এখানে। ভালো মুড়ি দিয়ে ইফতার করার জন্য রমজান মাসের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন এ গ্রামে।

ইতিমধ্যে এখান থেকে মুড়ি কিনে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ সহ দেশের নানা অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। তবে ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবং করোনার কারণে বিপাকে পড়েছেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা।

সরেজমিনে গোয়ালদীঘি, বারুহাট, বাকশোর, তেগাছি, তালগাছি ও ঢাকোপাড়া গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নারীদের হাতে ভাজা হচ্ছে গরম গরম মুড়ি। বাতাসে ঝনঝন মুড়ি ভাজার শব্দ। প্রতি বাড়িতেই মুড়ি ভাজার জন্য রয়েছে আলাদা ঘর। এ কাজে নিয়োজিত বাড়ির নারীদের কেউবা উঠানে ধান শুকাচ্ছেন, মাঝেমধ্যে সেই ধান নেড়ে দিচ্ছেন, মাটির চুলায় চাল গরম করছেন আর সেই চাল নারকেলের খিল কিংবা পাটকাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। কেউবা সেই গরম চাল মাটির পাতিলে রাখা বালুতে পাটকাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই চাল থেকে ফুটে যাচ্ছে মুড়ি।

মুড়ি তৈরিতে গ্রামে নারীদের পাশাপাশি ভাজা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এখানকার পুরুষরাও। ভোর থেকে ভাজা শুরু হওয়া এসব মুড়ি সকাল হলে নিয়ে যাওয়া হয় আড়তে। এ ছাড়া নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় রয়েছে মুড়ির আড়ত।

স্থানীয় মুড়ি বিক্রেতা এবং দূর দূরান্ত থেকে আসা পাইকারদের সমাগম ঘটে এ আড়তে। তা ছাড়া ডালসড়ক বায়তুন নূর জামে মসজিদ মুড়ির আড়তে নানা রকমের মুড়ি কেনাবেচা হয়। তবে এবার করোনার কারণে মুড়ি ব্যবসায়ীরা নাটোর না আসতে পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন নাটোরের ব্যবসায়ীরা।

আমন ও হরি ধানের মুড়ির চাহিদা বেশি। আমন মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ দুই হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকা, ১৬ ধানের মুড়ি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা ও অনান্য মুড়ি গড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এ আড়তে বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মুড়ি।

গোয়ালদীঘি কৃষ্ণপুর গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকারী মোবারক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, শুধু মুড়ি কিনতেই রমজান মাসে এই গ্রামে আসেন অনেক মানুষ। তবে নানা স্থানে মেশিনে প্যাকেট করা মুড়ি তাদের হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম নষ্ট করছে। তিনি আরও বলেন, এবার মহামারি করোনার প্রভাবে আমরা খুব একটা বেশি দাম পাচ্ছি না। কোনো রকম ব্যবসা ধরে রেখেছি।

তেগাছি গ্রামের আবদুল জব্বার বলেন, এই মুড়িতে কোনো রাসায়নিক সার দেওয়া হয় না। লবণ আর বালু দিয়ে ভাজা হয় মুড়ি। তাই সারা বছর ধরে আমাদের মুড়ির চাহিদা বেশিই থাকে।

ঢাকোপাড়া গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, এক মণ চালের মুড়ি ভাজলে ২০ থেকে ২৫ কেজি মুড়ি তৈরি হয়। আমরা রাত একটা থেকে দুইটার মধ্যে মুড়ি ভাজা শুরু করে পরদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মুড়ি ভাজার কাজ করি। তবে রমজান মাসে আমরা প্রায় সারাদিনই মুড়ি ভাজি।

মুড়ি ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, রমজান মাস আমাদের একটা মৌসুম। আমরা আশা করছিলাম হয়তো ভালো বেচাকেনা করব। কিন্তু দুঃখের বিষয় মহামারি করোনাভাইরাস আর লকডাউনের কারণে দূরদূরান্ত থেকে পার্টি আসতে পারছেন না। যে কারণে বেচাকেনা খুবই খারাপ।

তিনি আরো জানান, এখানে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মণ মুড়ি আমদানি হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেমন ঢাকা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ অনেক জায়গায় যায়। কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে পার্টি আসছেন না। আমাদের খুব খারাপ অবস্থা চলছে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমাদের এই ব্যবসা বন্ধের পথে। আমাদের দিকে একটু নজর দিলে চলতে পারব।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো শাহরিয়াজ বলেন, আমরা এ বিষয়ে দ্রুত নজর দেব, যাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং স্বচ্ছন্দে তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!