সালিশী বৈঠকে স্ত্রীকে তালাক না দেয়ায় যুবককে লাঞ্চিত করলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
4 মিনিটে পড়ুন
ছবি সংগৃহিত

১৮ই এপ্রিল, রবিবার বিকেলে এক সালিশি বৈঠকে জোর পূর্বক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার ধামরাইয়ের ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ এলাকার প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সালিশী বৈঠকের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে

জানা গেছে, সালিশি বৈঠকে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার রায় না মানায় এক যুবককে হাত-পা বেঁধে পিটিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও এক মেম্বার।

ভুক্তভোগী পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালাই গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. বাবু মিয়া (২৫) সানোড়া ইউনিয়নের শুলধন গ্রামের মো. সোনার উদ্দিনের মেয়ে পারভীন আক্তারকে (৩৫) বিয়ে করেন। তাদের আব্দুল্লাহ নামে দেড় বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

সম্প্রতি তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ হলে এ নিয়ে ওই গৃহবধু আদালতে বাবু মিয়ার নামে যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, মামলা চলমান জেনেও সানোড়া ইউপি মেম্বার মো. মহিদুর রহমান ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা একের-অপরের সঙ্গে যোগসাজশে রোববার বিকাল ৫টার সময় সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক প্রহসনের সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। মামলার আসামী বাবু মিয়াকে উপস্থিত হতে বাধ্য করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিদুর মেম্বার। তবে এ সালিশী বৈঠকে সানোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. খালেদ মাসুদ খান লাল্টু উপস্থিত ছিলেন না।

ঐ সালিশ বৈঠকে বাবু মিয়াকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন সালিশকারীরা। বাবু মিয়া সালিশি বৈঠকের এ রায় মানতে রাজি না হওয়ায় সানোড়া ইউপি মেম্বার মো. মহিদুর রহমান ও গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে ভরা মজলিশে তাকে গলাধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে এলাকার লোকজন বাবু মিয়াকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

বাবু মিয়া বলেন, আমাদের দাম্পত্য জীবন ভালই ছিল। আব্দুল্লাহ নামে দেড় বছরের একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান আছে আমাদের। হঠাৎ একদিন আমার স্ত্রী আমাকে জানায় যে সে আমার সঙ্গে ঘরসংসার করবে না এবং সে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে আমি নিতে আসলে সে আমার সঙ্গে যেতে রাজি হয়নি। উল্টো আদালতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরসংসার করতে চাই। এরপরও গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা ও সানোড়া ইউপি মেম্বার মহিদুর জোর করে আমাকে তালাক দিতে বলে এবং ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে। আমি কোনোটাতেই রাজি না হওয়ায় আমাকে এরা সালিশের মধ্যেই মারধর করে। আমি এর বিচার চাই।

ইউপি মেম্বার মহিদুর সালিশি বৈঠকের কথা স্বীকার করে জানান, কোনদিনই এদের ঘরসংসার হবে না। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পরিষদে বসেছিলাম। বাবু মিয়া সালিশি বৈঠকের রায় না মানায় পরিবেশ একটু উত্তপ্ত হয়েছিল।

গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা জানান, বাবু মিয়া আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাই মহিদুর মেম্বারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসেছিলাম। সালিশের রায় না মেনে বাবু মিয়া আমাদের সবাইকে বেইজ্জতি করেছে। ওর আরও কঠিন বিচার হওয়া উচিত ছিল।

সনোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. খালেদ মাসুদ খান লাল্টু বলেন, আমার পরিষদে সালিশ হওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে কেউ আমাকে অবগত করেনি। এ ব্যাপারে মহিদুর মেম্বার সাহেবই ভালো বলতে পারবেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!