মধ্যরাতে সূর্যের দেশ – দ্বিতীয় পর্ব

আবু আশরাফী
আবু আশরাফী
16 মিনিটে পড়ুন
এয়ারপোর্টে

ইস্ সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। দুপুরে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। এয়ারপোর্টে যেন বাজার বসেছে গেছে চিৎকার-চেঁচামেচি বাচ্চাদের কান্না নানান দেশের নানান ভাষায় কথাবার্তা আর কত শুনবো। ভাবছি আমার সব আশার গুড়ে বালি হল প্লেনে উঠবো ছাড়বে খাবার দিবে চা কফি খাবো আরো কি হবে খাওয়া-দাওয়া স্মোকিং জোনে সিগারেট চলবে ইচ্ছামত। এখন নিজেকে ভীষণ হতাশ হতাশ লাগছে। কি যে হবে জানিনা। 

ভাগ্যিস পাশে বসার মেয়েটি বলতে গেলে আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে নানান বিষয়ে অনেক কথা গল্প যদি না হতো আমি হয়তো আধা পাগল হয়ে যেতাম। কি হবে! কি হবে ভেবে। সে বাড়ি থেকে আলাদা কিছু জল খাবার নিয়ে এসেছে তাথেকে আমাকেও অল্প খেতে দিয়েছিল। কফি খাইয়েছে তার টাকায়। ওকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দেই। মুখে বলার সময় কই! অপেক্ষা আর কষ্টে বিনয় ভদ্রতা উপড়ে গেছে সব। ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখায়নি সে আমিও না এ হলো যাত্রী ভদ্রতা। অনেক আলাপ-আলোচনা হলো দেশ বিদেশ নিয়ে মানুষের আচার-ব্যবহার নিয়ে ওর অনর্গল ইংরেজি কথা আমার বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল তারপরও ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে আমি ইংরেজিতে উত্তর দিচ্ছিলাম অংশ নিচ্ছিলাম আলোচনায়। 

যাহোক, ভাবতে হবে এখন কি হবে কেন রাশিয়ার বিমান এয়ারপোর্টে আছে অথচ আমাদের মত গরিব প্যাসেঞ্জার নিয়ে উড়ছেনা, আসলে একেই বলে সস্তার তিন অবস্থা। নাহ্ উঠি একটু দেখি সিভিল এভিয়েশনের কাউকে জিজ্ঞেস করে আসল খবরটা জানি গিয়ে আদৌও প্লেন যাবে কিনা স্বপ্নের মস্কোতে।

কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে চিনে নিয়ে একদম সিভিল এভিয়েশন অফিসে হাজির হলাম। ভদ্রলোকের টেবিলের সামনে উপস্থিত হলাম। কিন্তু, তিনি walkie-talkie তো কথা বলেই যাচ্ছেন মাঝেমধ্যে টেলিফোন, ইন্টারকমে কথা বলছেন বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে আবার কি সব নানা রকম উদ্ভট শব্দ উচ্চারণ করছেন যা আমি কিছুই আমি বুঝিনা হয়তো সাংকেতিক শব্দ উচ্চারণ। কিন্তু আমি মজা পাচ্ছিলাম যখন তিনি বাংলায় কথা বলেন প্লেন কে বলছিলেন জাহাজ।

যাহোক অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি আমাকে সময় দিলেন দয়া করে এবং জিজ্ঞেস করলেন কী চাই, কেন উনার অফিসে আসলাম। বললাম আমি এরোফ্লোতের প্যাসেঞ্জার তিনটা তিরিশে আমার প্লেন ছাড়ার কথা এখন দেখছি প্লেন আছে শুনেছি সেটি কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছে কিন্তু, কিচ্ছু বুঝিনা তারাও কিছু বলে না শুধু বলে ওয়েট ওয়েট। কিন্তু কারণ কি আমি জানতে পারি আপনার কাছ থেকে দয়া করে।

তারপর তিনি আমাকে অনেকটা হেসে বললেন রাশিয়ার প্লেন তো তারা তাদের মত সবকিছু করে এই যে জাহাজ দাঁড়িয়েছে তাদের অনেক টাকা খরচ হবে। এয়ারপোর্টে সিভিল এভিয়েশন কে দিতে হবে। কিন্তু, যাচ্ছে জাহাজটি কলকাতা থেকে করাচি যাওয়ার কথা, করাচি থেকে তাসখন্দ তারপর মস্কো। কিন্তু অনুমতি চেয়ে নেমেছে ঢাকায় মস্কো থেকে ঢাকা আসার প্ল্যান ক্যানসেল করেছে আপাতত ঢাকার যাত্রীদের এ প্লেনটিতে নিয়ে যাবে। কিন্তু, ছাড়ছে না ইচ্ছে করেই তারা সরাসরি তাসখন্দ যেতে পারে যেহেতু করাচি থেকে তাদের কোন প্যাসেঞ্জার নিবে না। কিন্তু, তারা করাচি হয়েই যেতে হবে শুনছি করাচি এয়ারপোর্টে কি সমস্যা হয়েছে এয়ারপোর্ট ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে না কাউকেই।

কিন্তু, আরা কোন বিকল্প ব্যবস্থা নিবে না তারা তাদের মত যাবে। আপনাকে অপেক্ষা করতেই হবে আমি ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম আমার পাশে বসা মেয়েটিকে দেখলাম মনে হল যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে এবং অপেক্ষা করছিল। বসামাত্র জিজ্ঞেস করল কি বলল? আমি তাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বললাম এ অবস্থা সে কপালে হাত রেখে বলল ওয়েট ওয়েট ওয়েট বলে উচ্চস্বরে হেসে দিল সাথে আমিও যোগ দিলাম আর বাংলায় কিছু গালাগাল করলাম ইচ্ছামত আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবার এয়ারলাইনসকে। আমার কাছে তেমন ডলার নেই বাংলা টাকাও নেই যা আছে রাতে দুজনে যদি কফি আর সাথে কিছুই খাই তাহলে আমি চিন্তিত হয়ে যাব। যতক্ষণ হেলসিংকি না যাব ততক্ষণ আমি এয়ারলাইনের উপরেই খেতে হবে। 

এরমধ্যে রাশিয়ান এয়ারলাইনের বাঙালি লোকটা বলে যাচ্ছে আপনারা স্ন্যাক্স খেয়ে আসুন আবার লাইনে দাঁড়ালাম ওদের কাজকর্ম অনেকটা আর্মিদের মত । একজন একজন সামনে যাচ্ছি আর একটি ছোট সাইজের প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছে । যাক্ কিছু খাবার পেয়ে গেলাম । বেঁচে গেলাম মেয়েটিকে আর ভদ্রতা দেখিয়ে, কিছু খেতে ডলার আগ্রহ প্রকাশ করতেই হলো না।দুজনে আবার আমাদের আগের জায়গায় বসলাম ব্যগ আগের জায়গায় রাখলাম । দুজনে একসাথে প্যাকেট খুললাম দেখলাম ছোট সাইজের এক টুকরা শুকনা কেক, ছোট্ট একটা কাঁচের বোতলে জুস ও একটি টিস্যু পেপার। দুজনেই খেয়ে নিলাম আর কথা বলছিলাম জানিনা প্লেনেও ওরা এরকম খাবার দেয় কিনা ! তাহলে তো পেটের খিদায় জীবন যাবে। মুহূর্তেই খাবার শেষ।

 আবার ঐ বাঙালি ভদ্রলোক এসে বলে গেল মস্কো প্যাসেঞ্জার মস্কো প্যাসেঞ্জার প্লেনের বোর্ডিং কার্ড নিতে আসুন। মাইক্রোফোনেও বলছে মিষ্টি নারী কন্ঠে ‘ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ শুনছেন কিছুক্ষণের মধ্যে মস্কো যাওয়ার প্লেন জিরো জিরো নাইন ঢাকাএয়ারপোর্ট ছেড়ে যাবে অনুগ্রহ করে বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করুন। ‘আমরা দুজন একসাথে ব্যাগ-পোটলা নিয়ে একদম কাউন্টারের সামনে আমি সে পিছনে বোর্ডিং কার্ড নিলাম দুজন একসাথেই বসতে হবে ভালোই হবে পরিচিত হয়ে গেছে সে এখন আমার সাথে বিশ্বস্ত একজন সহযাত্রী। আবার ঘোষণা ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করার জন্য দুজনে একসাথে গেলাম ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে ব্যাগ পত্র সব খুলে দেখিয়ে শরীর টরির সব চেক করিয়ে নিয়ে ছেড়ে দিল। তারমানে আমরা ভাল মানুষ ভালো পেসেঞ্জার প্লেনে চড়তে দিবে। 

এখন যেখানে বসেছি সে জায়গাটুকু এয়ারকন্ডিশন ঠান্ডা বাতাসে হিমেল হাওয়ায় মনে হচ্ছিল যে ঘুমিয়ে যাব, চেয়ারে বসে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি আবার ভাবছি আবার কোন নির্দেশনা আছে কিনা “অপেক্ষা করুন দেরি হবে ওয়েট ওয়েট ওয়েট” আর শুনতে চাই না শব্দগুলো। আমরা দুজন পাশাপাশি বসে আছি আমি বাংলায় কিছু বকা দিয়ে দিলাম এয়ালাইনেরে। বিদেশি লোকদের আমি দেখলাম আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সাথী মেয়েটি বিরক্ত না হয়ে হালকা মুখে হাসি রেখে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে। যেহেতু, আমি বাংলায় গালিগালাজ করেছি সে বুঝতেও পারে নি। আমি কি বলেছি এটা ভেবে আরেকটা মজা লাগলো।

আবার ডাক পড়লো এখন যেতে হবে প্লেনের কাছে প্লেন অপেক্ষা করছে কিন্তু হালকা বৃষ্টিতে ভিজে যেতে হবে হেঁটে। কোন সমস্যা নাই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজলেও সমস্যা নাই তারপরেও তো প্লেনে উঠবো আমার স্বপ্নের মস্কোতে যাব । সেখান থেকে হেলসিংকি মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম সৃষ্টিকর্তাকে। হাঁটছি আর আমি পিছন ফিরে দেখছি মেয়েটিও আমার পিছন পিছন আসছে কিন্তু আমি একটু দাঁড়িয়ে দেখলাম ভালো করে এয়ারপোর্টাকে কারণ আজ রাত বারোটায় এ এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে।

যে প্লেন গুলি আজ বারোটার আগে নামবে আর ছেড়ে যাবে তাদের জন্য এই এয়ারপোর্টেই শেষ আগমন ও প্রস্থান ।এরপর থেকে ঢাকা কুর্মিটোলা এয়ারপোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক প্লেন চলাচল করবে। ব্যাগগুলি আগেই দিয়ে দিয়েছিলাম এয়ার লাইনের কাউন্টার দুটো লাগেজ ট্যাগ গুলো আমার কাছে আছে, হাত বেগ নেই দেখলাম মেয়েটির হাত ব্যাগ একটি আছে আর কাঁধে সুন্দর করে ঝুলিয়ে রাখা সম্ভবত চামড়ার ভ্যানিটি ব্যাগ।

প্লেনের দরজায় দাড়ানো দুই জন সাদা ধবধবে মেয়ে লাল পোশাক স্কার্ট পরা লাল টকটকে লিপিষ্টিকে হাসিমাখা ঠোঁটে আমাদেরকে রাশিয়ান ভাষায় ওয়েলকাম জানালেন অফিশিয়াল হাসিতে। যেহেতু আমাদের বোর্ডিং কার্ড একসাথে প্লেনের বসার সিটও একসাথেই । দুজন বসলাম পাশাপাশি এয়ার হোস্টেস দাঁড়িয়ে প্লেনের কোন দুর্যোগে কি করতে হবে এবং প্লেনের সিট বেল্ট বাধার কৌশল শিখিয়ে দিল, সবার যাত্রা শুভ কামনা বলল ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে আর কিছু কথা বলল রাশিয়ান ভাষায় যার কিছুই বুঝিনি। তবে একটা কথা বুঝতে পারলাম থ্যাংক ইউ কে বলছে স্পাসিবা।

যা হোক একটা শব্দ শিখতে পারলাম। প্লেন উড়ে চলছে পাইলট কি যেন বলছে কিছুই বুঝিনা হয়তো বলছে আমরা কত উপর দিয়ে যাচ্ছি। তবে, কিছুক্ষণ বাদে খাবার আসলো প্লাস্টিকের বক্স খুলে দেখলাম মুরগির বিরানি একটা মুরগির রান মনে হল যেন কাঁচা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আছে কালচে ছাই রঙের ছোট ছোট কাঁচের পুতির মত কি যেন। মেয়েটি আমাকে বলল এটা হল কেবিয়ার রাশিয়ার সবচাইতে দামি খাবার অর্থাৎ মাছের ডিম। আর দিয়ে গেল পানি আবারো একটি জুস এর কিছুক্ষণ বাদে এসে গেল চা না কফি আমি বললাম আমি চা খাব আপনি? সে বলল আমিও চা। কফি খাওয়া হয়ে গেছে কয়েকবার আর কফি বেশি খেলে ঘুম হবেনা আমি ঘুমাবো। 

একটু পর এয়ার হোস্টেস এসে বলল আর কিছু আমি মানে বুঝলাম না মেয়েটি বলল do you like the red or white? আমি বললাম no problem anything. মিষ্টি গন্ধ যুক্ত পানীয় চলে আসলো লাল রংয়ের খেতে কেমন জানি হালকা মিষ্টি টক স্বাদের। আমার গ্লাসের পানীয় শেষ হওয়ার পরপরই আমি সিট থেকে উঠে বললাম একটু সিগারেট খাবো কিন্তু, এখানে যদিও কোনো বাধা নেই অনেকেই তামাকের ধোয়া ফুঁকছে দেখেছি।

কিন্তু, আমি স্মোকিং সিটি যাচ্ছি উনাকে অনুমতির সুযোগ না দিয়েই উঠে গেলাম প্লেনের শেষপ্রান্তে দেখলাম সেখানে অনেকগুলি সিট খালি অন্তত বেশ কয়েক জন পুরুষ মহিলা বেশিরভাগই বয়স্ক তারা বেধুম সিগারেট, চুরুট টানছেন আমিও বসে পড়লাম একটা খালি সিটি তারপর, অজানা অচেনা এক ভদ্রমহিলা আমাকে একটা কালচে রঙের সিগারেট অফার করলো আমিও নিলাম। সেই লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। সে আমাকে বলল ভাঙ্গা ইংরেজিতে ইউ ফ্রম? আই ফ্রম রাশিয়া ইউ ঢাকা রিকশা মেনি রিকশা, ঢাকা পিপল গুড, গুড ফ্রেন্ড, রাশিয়ান ভাষায় জানি সেটাই বললাম স্পাসিবা।

সে অবাক হয়ে আমাকে রাশিয়ান ভাষায় আরো কিছু কথা অনর্গল বলল। বুঝলাম সে ভাবছে আমি অনেক রাশিয়ান ভাষা জানি আসলে ঘোড়ার ডিম একটা শব্দ শিখেছি স্পাসিবা মানে ধন্যবাদ। যাহোক, আমার সিগারেট শেষ আমি তাকে আবার স্পাসিবা বলে উঠে দাড়ালাম আমি চলে যাচ্ছি দেখি তার মুখে হতাশার একটা ভাব দেখছি হয়তো ভেবেছিল তার সাথে আমি চুটিয়ে আড্ডা দিব কিন্তু আমার ভাল লাগছিল না কথা বলতে তার সঙ্গ ছেড়ে চলে আসলাম।

 এসে দেখি মেয়েটি ঘুমিয়ে গেছে সিটের মধ্যে একদম কাত হয়ে আমার সিটে তার মাথা আরেকটা হাত আমার চেয়ারের হাতলে ধরা। ঘুমচ্ছেন নিবিড় ভাবে মনে হচ্ছে এটি তার দরকার ছিল তার। সেও আমার মত টায়ার্ড। মিনিট দুয়েক আমি তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম দেখলাম মেয়েটির গায়ের রং কালো কিন্তু কেমন একটা মিশ্রণ আছে মুখমন্ডলে যেন হঠাৎ ঝিলিক খাচ্ছে সোনালী একটা প্রলেপ এবং তার নাকি মুখের চেহারায় ঠোঁটে, লম্বাটে গলায় সবকিছুইতে একজন ক্লাসিক সুন্দরী বলা চলে। আমি অবাক হয়ে তাকে দেখছি কি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোচ্ছে।

আমি দাঁড়িয়ে আছি বলে এয়ার হোস্টেজ আমাকে অত্যন্ত নিচুস্বরে এক্সকিউজ মি ‌বল্ল তুমি আসো আমার সাথে ইশারায় বললো।‌ আমি তার পিছু পিছু গেলাম এদম সামনের দিকে যেগুলি ভিআইপি সিট সেখানে আমাকে বসতে দিল বলল সে যদি ঘুম থেকে উঠে তোমাকে খুঁজে আমি তোমাকে জানাবো আমি তাকে আবার স্পাসিবা বললাম। মুচকি হেসে সে চলে গেল তবে এ হাসিটার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা ছিলনা বলে মনে হল। যাহোক সিটে বসলাম আগের চাইতে নরম সামনে সুন্দর মতো পা ছড়িয়ে রাখা যায় বসার সিটি বেশ বড়।

আমি ভিআইপি একটা ভাব নিয়ে বসলাম আর মনে মনে ভাবলাম আমিও ভিআইপি হয়ে গেছি মাথাটা একটু হালকা ভারী ভারী লাগছে চোখে ঘুম। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি কিছুই বলতে পারিনা কখন যে করাচি থেমেছিল তাও বলতে পারি না যখন আমার ঘুম ভাঙলো তখন দেখলাম সেই মেয়েটি এসে আমাকে দেখছে আমাকে ডাকে নাই হয়তোবা সে আরও দু-তিন মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল আমি বললাম ভাঙ্গা ইংরেজিতে তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডিস্টার্ব না করে আমি এখানে এসে বসেছি সে সরি বলল। আমাদের এখন তাশখন্দে নেমে যেতে হবে। প্লেন হয়তো পাল্টাবে দুপুরের খাবার ওখানে রেডি আছে আমাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলেছে ইয়ার হোস্টেস। 

চলুন যাই। ঘুম থেকে উঠার আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে তুলে তার পিছন রওনা দিলাম প্লেনের সিঁড়ির কাছে নেমে গেছি কেমন জানি আবহাওয়া টা একটু গরম গরম লাগছে বাংলাদেশের মতো না একটা ভিন্ন আবহাওয়া শুকনা শুকনা। আমরা অনেকে হেঁটে যাচ্ছি আবার কয়েক জন বয়স্ক মানুষের জন্য ছোট্ট চেয়ার কারে নিয়ে যাচ্ছে। 

তাশখন্দ এয়ারপোর্টের ভিতরে যেয়ে দেখলাম বিশাল রেস্টুরেন্ট কি কোথায় বসেছে বুঝা যায় না মনে হচ্ছে যেন লোকজন নাই।‌ বিশাল কয়েকটি টেবিলে অনেক ধরনের খাবার আছে আমি কিছুটা ভয় পাচ্ছি এগুলো কি কিনে খেতে হবে! এত সুন্দর মজার মজার খাবার দেখা যাচ্ছে। আমার পকেটের অবস্থা! আমার পক্ষে সম্ভব না হয়তো চেয়ে খেতে হবে। মেয়েটি আমার ভাবসাব দেখে সে বললো চলুন জিজ্ঞেস করি এগুলা কি কিনে খেতে হবে? মেয়েটি এত দ্রুত ইংরেজি বলে যে আমার বুঝতে কষ্ট হয় কি আর করা যাক একজন গাইড তো পেলাম।

রেস্টুরেন্টে মোটা করে সাদা ধবধবে দুইজন মহিলা আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে কেমন জানি কৃত্তিমতা আছে হাসির মধ্যে। সঙ্গী মেয়েটি ওদেরকে জিজ্ঞেস করল ইংরেজিতে ওরা মনে হয় কিছুই বুঝে নাই শুধু এটুকু বলল ফ্রি ফ্রি। বললাম বলে কি রাশিয়ান এয়ারলাইনের তো বিরাট খাবার দাবারের ব্যাবস্থা! আর পায় কে যত পারব খাব, কোন সমস্যা নাই, খেয়ে নিলাম একেবারে গলা পর্যন্ত। খাবার-দাবার জুস দুধ পানি বিয়ার ওয়াইন যা ইচ্ছা খাওয়া যাবে যত খুশি মনে মনে বলছি জয় সর্বহারা। উদরপূর্তি করে রেস্টুরেন্টে বসে আছি আবার কোন নির্দেশনা আসবে, কখন আবার প্লেনে উঠবো।

এখন একদম মস্কো আর কোথাও থামাথামি নাই। কিন্তু, আমার ইচ্ছে হলো একটা সিগারেট খাই যেই সিগারেট খেতে যাব এ সময় মোটা মহিলাদের এক জন সে বলল রাশিয়ান ভাষায় অর্থাৎ হাত হাত নাড়িয়ে সিগারেটে ধরার মত দুই আংগুল নিয়ে বলল এখানে সিগারেট খাওয়া যাবে না আমি বললাম ঠিক আছে ও কিছু বুঝলো?

কে জানে আমি তো বলেছি বাংলায়। পনের বিশ মিনিটের মধ্যেই একজন এয়ারলাইনের কর্মকর্তা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বললেন চলো প্লেন দাঁড়িয়ে আছে মস্কো যাবে, তোমরা যারা মস্কো যাবে আমার সাথে আসো তার পিছু নিলাম দেখলাম যে রেস্টুরেন্টে অনেক লোক ছিল সবাই আমরা একসাথে যাচ্ছি আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি দেখছি পিছনে ফিরে দেখে নিলাম মেয়েটি আছে আর আমার দেখার ইচ্ছাটা ছিল এয়ারপোর্টা কেমন কিন্তু, ক্লান্তি ক্ষুধার্ত মানুষের উদরপূর্তি পর, আর কিছুটা পানীয় সব মিলে একেবারে শরীর মনে চাঞ্চল্যতা ছিল না বললেই চলে শুধু হাঁটছি আবার প্লেনের মুখে এয়ার হোস্টেস দুজন দুদিক থেকে আমাদেরকে অভিবাদন জানাল রাশিয়ান ভাষায় আবার দুজন।

আবার একসাথে বসা প্লেনে। প্লেন এখন অনেক উপরে মেঘ গুলো সব নিচে। জানালা দিয়ে দেখা যায় প্লেনের অনেক নিচে মেঘ আকাশটা নীল। প্লেন টেক অফ করার সময় দেখেছিলাম উনেক বন-জঙ্গল সবুজ আর কিছু কিছু সুন্দর শহরের চিত্র নদী দেখেছি একটা কি দুটা আস্তে আস্তে ফিতার মতো মিলিয়ে গিয়েছিল এখন নিচে কিছুই দেখা যায় না মেঘ ছাড়া প্লেন চলছে এয়ারক্রাফট আগের চাইতে অনেক বড় ও উন্নত মানের অনেক সুন্দর সোভিয়েত ইউনিয়ন রাশিয়ার অনেক যাত্রী আমাদের সাথে আমাদের সাথে হয়তো স্ক্যান্ডেনেভিয়ান কিছু প্যাসেঞ্জার আছে যাদের আমার মত কানেক্টিং ফ্লাইট হবে।

মেয়েটি দেখছে অনেকটা উবু হয়ে আমার গা ঘেষে কিন্তু সে কেমন যেন আনমনা। আমার ঘুম পাচ্ছে আস্তে আস্তে চলে গেছি অনেক‌ ঘুমে মেয়েটিও ঘুমোচ্ছে আমার ঘাড়ে মাথা রেখে আবার এয়ার হোস্টেস এসে আমাদেরকে আস্তে আস্তে ডাকছে মস্কো মস্কো অর্থাৎ আমরা এসে পড়েছি মস্কো।

(চলবে…)    

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
আবু আশরাফী নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের দরুন বানিহারি গ্রামের ডিঙ্গা পোতা হওয়ার পরে লম্বাডি পাড়াতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন। তিনি অনেক দেশ বিদেশ ভ্রমন করছেন। কবিতা, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, গল্প, লিখে থাকেন লোক সাহিত্য সংগ্রহ ও নাট্যগীতি রূপ দিয়ে থাকেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!