বরিশাল শের-ই বাাংলা মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্যসেবা টিকিয়ে রাখতে জনবল ও প্রয়োজনীয় সাপোর্ট নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। তারা এসময় অভিযোগ করে বলেন সমস্যার সমাধান না হলে করোনার হাত থেকে আমরা কেউ রেহাই পাবো না, এমনকি আপনারাও এর থেকে মুক্ত নন।
বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও সিভিল সার্জন অফিস এর কর্মকর্তারা একযোগে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পক্ষ থেকে সংকট মোকাবেলায় সবাইকে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানানো হয়। রবিবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তারা, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস, জেলাপ্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার ও সিভিল সার্জন ডা. মনোয়র হোসেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধপান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন এসময় কর্মরত ডাক্তারদের সাথে, সমস্যা ও সংকটের কথা খোলাখুলি বলার আহ্বান জানান।
এসময় ইন্টার্ণ ডাক্তার এসোসিয়েশন ডা. সুদীপ হালদার বলেন বর্তমানে ভর্তি, ও ক্লাস না থাকায় প্রায় ২০০ ইন্টার্ণ, যারা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা টিকিয়ে রাখতেন তারা নেই। হাসপাতালের ২২৪ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র রয়েছে ১৩৬ জন। তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেনীর স্টাফ রয়েছে অর্ধেকের কম। করোনা ওয়ার্ডে প্রতিটি রোগী পিছু ৪/৫ জন ভিজিটর আসছে, তাদের কাছ থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। লোকবল না বাড়ালে করোনা চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আবদুর রাজ্জাক জানান, আমাদের আরো আইসিইউ দেয়ার জন্য চিঠি আসলেও আমরা বলেছি লোকবল দেন। এখানে আইসিইউ দেখার মতো প্রয়োজনীল স্পেশালিষ্ট ও টেকনিশয়ান নেই। পুরো হাসপাতাল জুড়ে বর্জ্যে ভরে গেলেও সিটি কর্পোরেশন বর্জ নিচ্ছে না। আমাদের ৩৬ জন করোনা ওয়ার্ড ইনচার্জ, সহকারী পরিচালক মানিরুজ্জামান শাহীন জানানম করোনা ওয়ার্ডে ১৫০ সিট থাকলেও গতকাল রোগী ছিল ১৭২ জন। এত রোগীর চাপ আমরা কিভাবে নেবো। তারপেরেও আরো ৫০ শয্যার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা। কিন্তু জনবল না বাড়ালে আমরা কিভাবে বেড সংখ্যা বাড়াবো? পরিস্থিতি ভয়াবহতা যদি আরো বাড়ে তাহলে করোনা রোগীরা কোথায় ভর্তি হবে। এই ওয়ার্ডে কোন লিফট না থাকায় প্রয়োজনের সময়ে রোগীকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হচ্ছে। রোগীরা নিজেরাই সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। এর ফলে হাসপাতালের সিঁড়ি ভেঙে গেছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, আমার জীবনে ডায়রিয়ার এই পরিস্থিতি দেখিনি, ইতোমধ্যে ৬ জেলায় আক্রান্ত গত ১ মাসে ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, এর মধ্যে বরিশালে ৪ জন ও ঝালকাঠিতে ১ জন মারা গেছে। পরিস্থতি পর্যবেক্ষণে আই সি ডি ডি আর থেকে একটি প্রতিনিধি দল নমুনা পর্যবেক্ষণ করে গেছে। তাদের প্রেরিত রিপোর্ট পাওয়া গেলে বোঝা যাবে কি কারনে এই ডায়রিয়া। তবে করোনারও একটি উপসর্গ ডায়রিয়া থাকায় আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছি না।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, গত ৪৮ ঘন্টায় এই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নয়ে মোট ১১ রোগীর মৃত্যু হয়েছে, এই নিয়ে হাসপাতালের করোনা আইসোলোশন ওয়ার্ডে ৫৬১ রোগী মারা গেছেন, ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৮১৮ জন রোগী। তিনি আরও জানান, স্বল্প জনবল নিয়েও আমরা সার্ভিস দিয়ে গেলেও এর পরের পরিস্থতি মোকাবেলা করা আমাদের জন্য মুশকিল। তিনি যেকোন মূল্যে প্রয়োজনীয় জনবল ও লজিষ্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধির আহবান জানান।
বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল বলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে করোনা ওয়ার্ডের ৮ টি লিফট লাগানো সম্ভব হবে বলে পি ডাব্লিউ ডি বিভাগ নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া আগামী কাল থেকে করোনা বর্জ্য নেয়া হবে বলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। লোকবল ও অন্যান্য সাপোর্ট এর বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি-আমি নিজেন ব্যাক্তিগত ভাবে কথা বলতেছি-আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।