কোভিড-১৯ এর দায় কার!

তারিকুল ইসলাম পলাশ
তারিকুল ইসলাম পলাশ
5 মিনিটে পড়ুন

পাঁচ পর্বের সমাজ-ভাবনা; কোভিড-১৯ এর দায় কার! (তৃতীয় পর্ব)

কুপ্রভাবে পরোপকারী বৃক্ষটি মনের অজান্তে করোনার গুপ্ত ঘাতক এজেন্ট রক্তচোষা (vampire) বনে যায়, সিরিয়াল কিলারের মত পর্যায়ক্রমে, তারই শাখা প্রশাখার নির্মম বিভীষিকাময় মৃত্যুর কারণ হয়। প্রতিটি জীবের বিনাশ চিরন্তন সত্য কিন্তু একটু অসচেতনতায় সমস্ত মানবকুলের ধ্বংসের কারণ কেউ যেন না হয়। এমন মৃত্যু চিরশত্রুর জন্যও কেউ যেন কামনা না করে। তাইতো বিশ্বমারি দুর্যোগকালীন এই সময়ে দ্বিধাবিভক্তি না হয়ে, বিশ্ব সর্বজনীন স্বীকৃত করণীয়; নিজে স্বাস্থবিধি মেনে সুরক্ষায় থাকি, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করি। সময়ের প্রয়োজনে, মাদার তেরেসার(মেরি টেরিজা বোজাঝিউ) মতো কেউ আবির্ভূত হবেন…

অতি ছোঁয়াচে (সংক্রামিত) কুষ্ঠ (mycobacterium leprae) রোগ নিরাময়ে মাদার তেরেসার সংগ্রাম সমাজকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার আধার!কিসের নেশায় কিসের আশায় উন্নত দেশের একজন নাগরিক ভারতের প্রাচীন নগরী কলকাতাতে আবাস গড়লেন! হয়তো মনে করেছিলেন; সময়ের আগে মানুষের মরা, এ যে বড় দায়! মরার আগে মনুষত্বের মরণ, এ কি করে হয়! তাই হয়তো; যার সাথে স্থানীয় মানুষের ভাষা-ধর্ম-বর্ণ-সংস্কৃতি ভিন্ন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি অন্তর্ধান হবার পূর্ব পর্যন্ত অসহায় মানুষদের সেবা দিয়েছেন! যে সকল মানুষের অস্থিমজ্জায় নেশায় সমাজকর্ম তাদের রুধিতে পারে কি কেউ? সকল বাধা অতিক্রম করে তারা তাদের গন্তব্যের লক্ষ্যে পৌঁছাবেই, আমৃত্যু! আর পেশা হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে, যখন মানুষের নেশা-পেশা একাকার হয়, তখন কী বা করার থাকে! তাই তিনি জগদ্বিখ্যাত মহিয়ষী নারী।

মাদার তেরেসা তিনি নিজ ধর্মের কট্টর অনুসারী ছিলেন! যে কোনো ধর্মজ্ঞানের নিবিড় চর্চা মানুষের আলোর পথ, ধর্মান্ধতা অন্ধকারের গলিপথ! কোভিড-১৯ ছোঁয়াচে রোধে দুনিয়ার সর্বত্র যখন সৎকার সংরক্ষিত! সেথায় তখন জোট বেঁধে, ধর্ম না বিজ্ঞান বড় সেই প্যাঁচ খোলার নিরর্থক বিতর্কে মত্ত! জেগে ঘুমানো, চেতনায় অচেতন কুম্ভকর্ণদের সচেতন করার উপায় কি! মানব কল্যাণ কর্মেই ধর্ম। মানুষের জন্যই ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়; তিনি তা বাস্তব প্রমাণ রেখে গেছেন এই ধরণীতে…

নিঃশ্বাসের সাথে ছড়াতে পারে, এমন ভয়াবহ ছোঁয়াচে কুষ্ঠ রোগীদের নিবিড় সেবা দিয়েছেন আমৃত্যু, ভয়কে করেছেন জয়। তাইতো, জগতের সকল অনুজীব-জীব-প্রাণী এক সময় মানুষের বশ্যতা স্বীকার করে বিধায় মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। প্রমান করেছেন তিনি আরো একবার! মানুষ সকল প্রতিকুলতাকে জয় করতে পারে বিধায় অন্য প্রজাতির মত এখনও বিলুপ্ত হয়নি। এই জগতে এই ভাবেই হয়ত টিকে থাকবে অনন্তকাল।

বিশ্ব করোনা নিয়ে অনেকটাই অন্ধকারে আচ্ছন্ন! সর্বজনিন স্বীকৃত মতে, একমাত্র সুরক্ষা সচেতনতা-সতর্কতা-সাবধানতা। জেনেশুনে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া বোকামী যা আত্মহত্যার সামিল। অসচেতনতার মহামারিতে মৃত্যু শহীদের মর্যাদা পেতে পারে না। মাদার তেরেসা টেকনিক্যাল পার্সন ছিলেন, তিনি জেনে-বুঝেই কাজটি করতেন। একজন ওঝা সাপ নিয়ে যখন খেলা করে, সাধারণ মানুষ তখন নীরব দর্শক থাকে…! এখনো কৃষি প্রধান দেশের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ,মানুষ অভুক্ততায় মারা যাচ্ছে কিন্তু একজনের অসাবধানতায় গোটা জাতিকে তার চরম মূল্য দিতে হতে পারে। যন্ত্রনির্ভর দেশসমূহের অবস্থা জটিল হতে পারে; খাবার না থাকলে টাকা দিয়ে কি হবে?

এখন হয়তো পৃথিবীর কোথাও প্রকৃতির কোনো মানব সন্তান কোভিড-১৯’এর প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক উদ্ভাবনীতে মত্ত। তাইতো, ঝুঁকির মাঝেও যে কোনো কাজ বা পেশায় পর্যাপ্ত কর্ম-ধ্যান-জ্ঞান ছাড়া ভালো কিছু প্রত্যাশা করা দুরূহ। চৌকোষ স্মার্ট কঠোর পরিশ্রম আর নির্ভিক, এই তিনটির সমন্বয় বিজয়ের শর্ত কিন্তু আজ শঙ্কা হচ্ছে, ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট টিকার অ্যন্টিবডি বাইপাস হয়ে যাচ্ছে বিধায় মহামারী দীর্ঘায়িত হতে পারে। প্রকৃতি তাই মানুষের রক্ষা কবচ, কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়! সব ভালো একসাথে পাওয়ার আশা করা বৃথা। এই হয়তো জগতের নিয়ম। কিন্তু অবুঝ মানুষ সব একসাথে পেতে চায়। অনেকটা ‘হাঁসের সোনার ডিম পাড়া’ কল্প গল্পের মত! শিশুকালে ‘আলাদিনের চেরাগ’ গল্প পড়াতেই যত ভুল হয়েছে, অচেতন মানুষ সব কিছু ঘষা দিয়ে মুহূর্তে পেতে চায়; শর্টকাট! ক্ষণিকেই…

তাই হয়তো, মানুষ ক্ষণিকের আবেগে বশীভূতর মোহে বারংবার; ইজ্জত-রক্ত, এমনকি অকাতরে জীবন দিয়েছে। তার, সুফল ভোগ করেছে গুটিকয়েক মানুষ! কোনো কিছুর সর্বজনীন সুবিধা পেতে হলে দরকার; নিবিড় গবেষণা, স্বল্প-মাঝারি-দীর্ঘ মেয়াদী বাস্তবসম্মত সম্মিলিত পরিকল্পনা। বিশ্বময় এগুলোর বড্ড আকাল চলছে এখন, ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হচ্ছে! ‘মাউথ ক্যাডার রাজদের দৌরাত্ম্যের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন! অবাক বিস্ময়ে নির্বাক-নিষ্পলকে তাকিয়ে থাকে ধরণী…

প্রাকৃতিক ভাবে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা… ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’ তাইতো, বদ্বীপটি প্রকৃতিগত ভাবে বিশ্বমারি ভয়ানক ছোঁয়াচে ব্যাধি ’কোভিড-১৯ হতে অনেকটা সুরক্ষা দিচ্ছে, তার অসহায়-সহায় সম্বলহীন প্রকৃতির সন্তানদের! প্রমাণিত; মাঠে-ঘাটে খাটাদের করোনায় আক্রান্তের হার নগন্য! প্রকৃতিক জীবন-যাপন কারীদের ইমিউনিটি বেশী, তাই করোনায় আক্রান্ত হার কম বিধায়; তাঁরা স্বাস্থবিধি ও লকডাউনে অনীহা, তাদেরই সংখ্যা বেশী! তাই যা হবার তাই হয়। ইতিপূর্বে সংক্রামক ব্যাধিতে, করোনা মহামারির থেকেও অনেক বেশী মানুষের প্রাণ গেছে। ডায়রিয়ার মতই প্রকৃতিক প্রতিষেধক হয়তো আমাদের প্রকৃতিতে আছে কিন্তু গবেষণা করবে কে?  অন্যদিকে প্রতিনিয়ত করোনার টিকা নিয়ে মহাব্যস্ত কিন্তু কোনো কারণে বাংলা ভ্যারাইটি করোনা রুপান্তরিত হলে বাঙ্গালীর গবেষক কোথায়?

(চলবে…)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক এবং প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এইড ফাউন্ডেশন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!