ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে মামুনুল হকের কপটতা সমর্থনযোগ্য নয়

ভায়লেট হালদার
ভায়লেট হালদার - প্রধান সম্পাদক
9 মিনিটে পড়ুন

সামাজিক মিডিয়া প্রকাশিত বেশ কিছু মন্তব্যে দেখা গেছে, দল বেঁধে রিসোর্টে মামুনুল ঘেরাও করাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ স্বেচ্ছায় (বিবাহ বহির্ভূত) যদি মিলিত হয় তবে দোষের কি আছে! তারা শোবে কি শোবে না, তা নিয়ে জনগণের মাথা ব্যথা কেন?

আমিও বলি দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ব্যক্তিগত যাপিত জীবনে সমাজের মানুষের কি এসে যায়! তবে কথা থেকে যায়। আইনত বাংলাদেশে স্ত্রী/স্বামী একই ছাদের নীচে বসবাস করা অবস্থায় অন্য কোন ব্যক্তির বিবাহ বহির্ভূত সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন বা পরকীয়াকে অনুমোদন করে কি? এমনকি পশ্চিমা সেক্যুলার দেশগুলোতে দাম্পত্য বজায় থাকা অবস্থায় অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বা পরকীয়াকে আইনত ব্যভিচারী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেই গণ্য করা হয়।

এবার বলি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরা যে কারো সঙ্গে যে কারও সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন যদি ঐ ব্যক্তি অন্য কারো সঙ্গে কমিটমেন্টে আবদ্ধ না হয়ে থাকেন। যেমন অবিবাহিত নারী/পুরুষ, বিধবা/বিপত্নীক অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পরে একাকী জীবন যাপন করছেন। ইউরোপে বিবাহ বহির্ভূত যৌনকর্ম সিদ্ধ হলে বিবাহিত’রা স্বামী/স্ত্রী ছাড়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংসর্গ করা অনুমোদন করে না। সেক্ষেত্রে তারা বিবাহ বিচ্ছেদের পরে নিজে ইচ্ছানুযায়ী প্রেমিক/প্রেমিক অথবা অপ্রেমিক/অপ্রেমিকার সঙ্গে যৌন সংসর্গ করতে পারে।

আমেরিকার মতো একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ও মনিকার অবৈধ প্রণয়ের ঘটনায় আমেরিকানরা কি পরিমাণে তীব্র ক্ষোভ নিন্দা ছুঁড়েছিল, তা নিশ্চয়ই মনে আছে?

গত কয়েকদিন আগে আমাদের দেশেও একজন ক্রিকেটারের অন্য আরেকজনের স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে ফেসবুক ও গণমাধ্যমে কি নিন্দা ও ক্ষোভ উগড়ে দেয়নি নেটিজেনরা?

বাংলাদেশে মুক্ত সম্পর্ক ও মুক্ত যৌনাচার কি কেউ কি আন্দোলন করেছে আজ অবধি? যৌন কর্মের অভিযোগে অভিযুক্ত করে হোটেল থেকে নারীদের ধরে জেলে দিচ্ছে  তাদের যৌনকর্মের অধিকার নিয়ে কেউ কি কথা বলেছে?

ব্যক্তি স্বাধীনতা ও শর্তহীন সম্পর্ক গড়তে চাইলে চুক্তিযুক্ত বিবাহ প্রথা বাতিল করে দেখান আপনারা উন্নত বিশ্বের দর্শনকে টপকে কতটা এগিয়েছেন?

বাংলাদেশের হোটেলগুলো ভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকে (স্বামী ও স্ত্রী ছাড়া) একরুমে থাকা অনুমোদিত নয়। কেন নয়? সকলেই কি যৌনতা করার জন্য হোটেল ভাড়া নিয়ে থাকে? অনেককেই স্বামী ও স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও হোটেল কর্তৃপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। অনেককে কাবিন দেখাতে বাধ্য করা হয়। হোটেলে থাকতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে অনেককেই পড়তে হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে নেই কোন  লেখালেখি এবং প্রতিবাদ।

বিয়ে মানে একটি চুক্তি। দুজন ব্যক্তির মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী স্বামী/স্ত্রী  তৃতীয় কোন ব্যক্তির সঙ্গে যৌনকর্ম করা বা পরকীয়া করা মানে চুক্তি ভঙ্গ করা এবং যথারীতি ব্যভিচারী। আইনত, ধর্মীয় অথবা সামাজিক দৃস্টিকোণ থেকে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক কোনভাবেই অনুমোদন করে না। যেহুতু বাংলাদেশে জন সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে ইসলাম ধর্মের মানুষের সংখ্যা বেশী। রাস্ট্রীয় আইনের পাশাপাশী ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। 

মামুনুল হক একজন ধর্মীয় গুরু ও রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চান। নারীদের পোশাক কেমন হবে এবং নারীদের চারদেয়ালের মধ্যে কিভাবে জীবন যাপন করতে হবে- নারীর বিষয়ে তিনি ওয়াজে নসিহত করে থাকেন। দেশের আইন ও ধর্মীয় অনুশাসন ভঙ্গ করে একজন বেগানা নারীকে নিয়ে আনন্দভ্রমণে গিয়ে একটি রিসোর্টে আমোদ স্ফূর্তি করতে পারেন? যদিও মামুনুল হক আল্লাহর কসম কেটে দাবী করেছেন, ঐ নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি ঐ নারীকে বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তাৎক্ষনিক তিনি বলতে পারেননি, কোথায় কবে কোন কাজীর অফিসে তাদের বিবাহ রেজিস্টার করা হয়েছিল!? তিনি কথিত স্ত্রী’র নাম আমেনা তৈয়বা, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, শ্বশুরবাড়ি খুলনা। বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ ঐ নারী তার বয়ানে বলেছে, তার নাম জান্নাত আরা ঝরনা। পিতার নাম অলিউর রহমান, বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা। এখানেই মামুনুল ও কথিত স্ত্রীর বক্তব্য পরস্পর বিরোধী।

এরপরে মামুনুল হক ওই রিসোর্ট থেকে বের হয়ে ফোন করে তার প্রথম স্ত্রীকে বলেছেন, ‘পুরো বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে এসে বলবো। ঐ মহিলাটা যে আমার সাথে ছিল, সে হচ্ছে আমাদের শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ, বুঝছো! ওখানে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে ওখানে ওটা বলা ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। তুমি বিষয়টা নিয়ে অন্য কিছু ভেবো না। তোমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে তুমি বলো যে, তুমি সবকিছু জানো।‘

এরপরে তিনি কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ওরফে জান্নাত আরা’র কাছে ফোন দিয়ে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।

পাশাপাশি মামুনুলের বড় বোন তার প্রথম স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেছেন, শোন, তুমি কোন পেরেশানী কইরো না। কোন অস্থির হইও না, আমরা তো আছি। তোমার তো কোন অসুবিধা নাই। তোমারে যদি কেউ ফোন দেয় বা এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে, তুমি বলবা যে, হ্যাঁ আমি অনুমতি দিছি। আমার শাশুড়ি থাকতেই করাইয়া গেছে। আমার কথা কি তুমি বুঝছো? আমরা তোমার সাথে আছি। পরে কি করতে হয়, না হয় আমরা দেখমু। কিন্তু তুমি শক্ত থাইক্যো। এ সময় মামুনুলের স্ত্রী জানতে চান এ ঘটনা সত্যি কিনা! উত্তরে বড়বোন বলেছেন, না না, এঘটনা সত্যি না। এরপরেও তিনি তাকে নসিহত করেই গেছেন এবং মামুনুলের বিরুদ্ধে কথা না বলতে বারণ করেছেন।

কি বুঝলেন পাঠক?

ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে বিবাহিত পুরুষের বহুগামিতা ও পরকীয়াকে সমর্থন দেন অনেকেই। কেননা ঘরের নারীটি আপনার সন্তানের মা বিধায় তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সন্তানের লালন পালন তথা গৃহসেবাদাসী বানিয়ে চার দেয়ালের ভেতরে আবদ্ধ করে রেখেছেন। আবার যাকে ঘরের বাইরে অর্থাৎ নিজ চিত্ত বিনোদনে জন্য পরকীয়া করছেন তাকেও ব্যবহার করছেন আপনার মনোরঞ্জনের জন্য, আপনার যৌনসেবা করার জন্য। আসলে পুরুষের ভালবাসা কোন নারীর জন্য? এক হৃদয় একই  সঙ্গে কতজন নারীর ভালবাসা পেলে তৃপ্ত হয়? নাকি ভালবাসা নয়, যৌনতাই মুখ্য?

একটি সম্পর্ক বর্তমান থাকতে আরেকজনের সঙ্গে একই সম্পর্কে জড়িয়ে পরা কোন যুক্তিতে যুক্তিযুক্ত ও সমর্থনযোগ্য?

মামুনুল হকের কথায় অসামঞ্জস্যতা, মিথ্যাচার, স্ত্রী সঙ্গে প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা এবং বিবাহ বহির্ভূত অন্য একজন নারীকে যৌনদাসী বানিয়ে সেবা গ্রহণ করা কি নৈতিক বার্তা দেয়? এছাড়াও পরিবারের আত্মীয়-স্বজন দ্বারা স্ত্রীকে মিথ্যা শান্তনা দেওয়া, স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে বক্তব্য থেকে বিরত থাকা এবং মামুনুলের পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। মামুনুল হক যদি দুই বছর আগে বিয়ে করেই থাকেন, তবে ঐ নারীকে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি না দিয়ে তিনি ঐ নারীর প্রতিও চরম অন্যায় করেছেন। কপটতা, প্রতারণা, ঠকবাজ কোন যুক্তি-বিচার বিবেচনা বোধে সমর্থনযোগ্য?  

মামুনুল হক একজন ধর্মীয় নেতা হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসন বিরোধী কাজ এবং একজন রাজনীতিবিদ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে দেশের আইন বিরোধী কাজ করতে পারেন কিনা? যদি ব্যক্তি মামুনুল কোন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে অবকাশ যাপন করার মানবিক অধিকার ও স্বাধীনতা থাকে তবে তার প্রথম স্ত্রী’র একই অধিকার স্বাধীনতা আছে। তবে মামুনুলের স্ত্রী কেন ঘরের চারদেওয়ালে ও কালো তাঁবু বন্দী হয়ে জীবন যাপন করছে? যদি পুরুষের দুইটি স্ত্রী রাখার অধিকার থাকে তবে নারীরও দুইটি স্বামী রাখার অধিকার থাকবে। সেক্যুলার ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী পুরুষেরা কি এক স্ত্রীলোকের দুই স্বামী হয়ে ঘরসংসার করতে পারবেন?  যে মূল্যবোধ নিয়ে পুরুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, সেই একই মূল্যবোধ নিয়ে নারীও জন্মগ্রহণ করে। তবে সে মূল্যবোধের প্রকাশ থেকে কেন বঞ্চিত হবে নারী?

নিজের মতবাদ ব্যক্ত করা, বাক স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। সেক্যুলারিজম ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে কেউ যেন কারো অধিকার ও আত্মসম্মানবোধকে আঘাত না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরী। একগামী সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী লোকেরা যদি বহুগামী হতে চায় , তবে তার আগে সকল লোকের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজন। আইনের সংস্কার প্রয়োজন। যতক্ষণ আইন বলবৎ আছে, তা অমান্য করার অধিকার কোন নাগরিকের নেই। বড়জোর আইন পরিবর্তনের জন্য জনমত গঠন ও আন্দোলন করা যেতে পারে। আর হ্যাঁ, যারা কারও সঙ্গে প্রেম/বিয়ের কমিটমেন্টের সম্পর্কে আবদ্ধ নন, এমন যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যে কারও সঙ্গেই  প্রেম/ যৌনতায় আবদ্ধ হতে দোষ নেই, তবে তা হোক দুজন মানুষের সম্মতিতে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: ভায়লেট হালদার প্রধান সম্পাদক
প্রধান সম্পাদক (২০২১-২০২৩), সাময়িকী
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!