পৃথিবীর অসুখ

অতিথি লেখক
অতিথি লেখক
4 মিনিটে পড়ুন

শাম্মী তুলতুল

রাসেলের স্কুল বন্ধ অনেক দিন ধরে। কিন্তু এবারের বন্ধটা তার একদমই ভালো লাগছে না। মনে আনন্দ নেই। কারণ বন্ধটা পৃথিবীর অসুখের কারণে। রাসেল মনে করে- করোনা নামক একটি অসুখ পৃথিবীকে অসুস্থ করে ফেলেছে। আর এই রোগ এখন পৃথিবী থেকে মানুষের শরীরে এসে বাসা বেঁধেছে।

ইতিহাসে ঘটা অনেক রোগের কথা সে বাবা-মায়ের কাছে শুনেছে। কিন্তু সেগুলো তার কাছে রূপকথার গল্প মনে হতো। কিন্তু আজ যে রোগ সে দেখতে পাচ্ছে সেটি বাস্তব, রূপকথা নয়।

পৃথিবীর অসুখ world, virus, planet earth
ছবি: জর্জেদুয়ার্ডো, পিক্সাবে

এই রোগে অনেকে মারা যাচ্ছে। পুরো পৃথিবী দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও বাদ নেই। তাই এক মাসের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। দুই ঈদ আর পূজায় লম্বা স্কুল ছুটি হলে রাসেলের চোখে-মুখে থাকত উচ্ছ¡াস আর আনন্দ। কিন্তু এই ছুটিটা পুরোপুরি ভিন্ন, নিরানন্দ। স্বাভাবিক ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে যায়। নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি বেড়াতে যায়। খালাতো, মামাতো-চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলাধুলা করে। ছুটে যায় পাহাড় কিংবা সমুদ্র দেখতে। সেই সব দিন দারুণ আনন্দের।

কিন্তু এবারের ছুটিতে সবাই ঘরবন্দি। রাসেল তার বন্ধু মানিককে ফোন করে বলে, কিছু ভালো লাগছে না জানিস। প্রতিবার স্কুল বন্ধ হলে কত ভালো লাগত। কিন্তু…।

ফোনের ওপাশ থেকে মানিক বলে, হ্যাঁরে ঠিকই বলেছিস, আমরা এমন বন্ধ চাই না। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। মাঠে খেলতে চাই। সবার মুখ দেখতে চাই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে চাই। কেউ কাউকে দেখব না, কেউ কাউকে ধরব না, দূরে দূরে থাকব- এ কেমন অসুখ বল তো? ইসস স্কুলের খালাকে খুব মনে পড়ছে, তাই না রাসেল?

– হ্যাঁ, টিফিন কিনে এনে দিলে আমরা উনাকে প্রায়ই টাকা দিতাম। উনি কত গরিব। এই কয়দিন না খেয়ে থাকবেন নিশ্চয়।

– অনেক গরিব লোকই এই লকডাউনে না খেয়ে আছে। কারণ তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তাদের কাজ নেই।

রাসেল বলে- মা বলেছে সব সময় নিরাপদ আর সচেতন থাকতে। তাহলে এই রোগ ধীরে ধীরে চলে যাবে।

মানিক বলে, হুম। আমার আম্মুও বলেছে আমরা সতর্ক হলে খুব জলদি এই রোগ ভেগে যাবে।

– আচ্ছা মানিক, আমরা একটা কাজ করতে পারি না?

– কী বল?

– সবাই সবার উপকার করছে। আমার ছোট চাচু আজ অনেক গরিবকে খাবার প্যাকেট করে বিলি করছে। চল আমরা কিছু ভালো কাজ করি। স্কুলের দারোয়ান চাচাকে ফোন করে বলি তিনি আর খালা যেন আমাদের বাড়িতে এসে খাবার নিয়ে যায়।

– দারুণ একটা কথা বলেছিস রাসেল। আমি তাহলে ফোন করে উনাদের আসতে বলি।

– হ্যাঁ তাই কর।

মানিক ফোন করে দারোয়ান আর খালাকে রাসেলের বাসায় আসতে বলে। একটু পরই কলিং বেল বাজল। শব্দ শুনতেই রাসেলের মা তাকে বলেন, যেই আসুক বাবা দূরে থেকো।

– আমার মনে আছে মা।

এরপর দরজা খুলতেই দারোয়ান আর খালাকে দেখে রাসেল হেসে দেয়। তাদের পেছনে মানিকও ছিল। কিন্তু অবাক ব্যাপার, দুজনেই দূরত্ব বজায় রেখে দূরে ছিল। মা ভীত হয়ে কাছে যেও না বলতে বলতে দরজার সামনে এসেই দেখেন, তারা দুজন নিজ থেকেই দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। মা একটু লজ্জা পেলেন। বললেন, কিছু মনে করবেন না।

দারোয়ান চাচা বললেন, না না আমরা জানি, যে অবস্থা যাচ্ছে এতে মনে করার কিছু নেই।

রাসেল মাকে দাঁড়াতে বলে ভেতর থেকে চাল-ডাল আর জমানো কিছু টাকা এনে তাদের দুজনের হাতে ভাগ করে দিল। মানিকও কিছু জিনিসপত্রের প্যাকেট তাদের হাতে দিল।

দারোয়ান আর খালার চোখে আনন্দ অশ্রæ গড়াল। রাসেল বলল, খালা এই পৃথিবীর অসুখ সেরে যাবে। আগের মতো নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে দেখা হবে। আমরা সবাই যে যার ধর্মমতো প্রার্থনা করে এই রোগ তাড়িয়ে দেব একদিন। সবাই একসঙ্গে বলে উঠল- ঠিক ঠিক একদম ঠিক। আমরা সবাই সে আশায় আছি।

✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
সাময়িকীর অতিথি লেখক একাউন্ট। ইমেইল মাধ্যমে প্রাপ্ত লেখাসমূহ অতিথি লেখক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!