কাপুচিনসের ‘ছোট্ট ফেরেশতা’

অতিথি লেখক
অতিথি লেখক
3 মিনিটে পড়ুন

অনন্ত আহমেদ

ছোট্ট একটা কাঠের বাক্সে শুয়ে আছে মেয়েটা। ওর নাম রোসালিয়া লোমবারডো। ফুটফুটে চেহারা। বয়স মাত্র দুই। ওর সোনালি চুলে খুব যতœ করে বেঁধে দেয়া হয়েছে হলুদ রঙের সিল্কের ফিতা। হয়তো আদরের সন্তানকে শেষ চিহ্ন হিসেবে ওর মা-ই বেঁধে দিয়েছেন ওটা। ‘শেষ চিহ্ন’ শুনে চমকে উঠলে? হ্যাঁ, মারা গেছে রোসালিয়া। তাও সেটা আজ-কালকের কথা নয়। ১৯২০ সালে মৃত্যুর জগতে পাড়ি দিয়েছে ছোট্ট মেয়েটা। গবেষকরা বলছেন, নিউমোনিয়ায় ভুগেই মারা গেছে ও। কিন্তু এই এতদিন পরেও অবিকৃত আছে ওর মৃতদেহ। ছোট্ট কাঠের বাক্সে শায়িত মেয়েটাকে দেখে মনে হবে, নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ও। চোখ দুটো বন্ধ করা। দেখে মনে হবে, এই বুঝি চোখ মেলে তাকাবে সবার আদরের খুকুমনি। ওর শেষ আশ্রয় হয়েছে সিসিলির কাপুচিনস ভূগর্ভস্থ সমাধিতে। প্রায় মমির মতো করেই সংরক্ষণ করা হয়েছে ওর মৃতদেহ।

মমির কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে মিসরের দৃশ্য ভেসে ওঠে। কিন্তু এ ধরনের প্রক্রিয়া মিসর ছাড়াও পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে আছে। ইতালির কিছু শহরে মৃত ব্যক্তিদের শরীর সংরক্ষণের উদাহরণ দেখা যায়। এর মধ্যে সিসিলি প্রদেশে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি মমির খোঁজ। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মৃতদেহ সংরক্ষিত আছে এখানকার ভূগর্ভস্থ সমাধিতে। সেদেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রথা। কাপুচিনস-এ পাওয়া বেশিরভাগ মমি সমাজের বিত্তবান-উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের। এদের মধ্যে আছে সমাজপতি, ব্যবসায়ী আর পাদ্রীরা। সাধারণত মৃতদেহের সঙ্গে তাদের সেরা পোশাকটি দেয়া হতো।

মমিগুলোর বেশিরভাগ শুকিয়ে চিমসে হয়ে গেছে। কারো মাড়ি পচে গেছে, কারো কঙ্কালের ওপর কোনোমতে চামড়াটা আটকে আছে। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে বা কেউ শুয়ে আছে। কিন্তু সবার পরনেই সুন্দর পোশাক। সিংহভাগ মমিই ১৯ শতকের। বেশিরভাগ মৃতদেহ বিকৃত হয়ে গেলেও রোসালিয়ার মতো কিছু দেহ আছে একদম অবিকৃত। পর্যটকরা তাই এই ছোট্ট মেয়েটির নাম দিয়েছেন ‘ঘুমন্ত সৌন্দর্য’। পালেরমো শহরবাসীরা অবশ্য তাকে ‘ছোট্ট ফেরেশতা’ নামেই ডেকে থাকে।

১৯২০ সালে সমাধিস্থ করা রোসালিয়া হলো কাপুচিনস সমাধির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। সবচেয়ে পুরনো সদস্য হলেন একজন খ্রিস্টান ভিক্ষু। ডসলভেসতো ডি গুবিও নামের এই ভিক্ষু মৃত্যুবরণ করেন ১৫৯৯ সালে। ঠিক কবে থেকে এখানে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে ভূগর্ভের শীতল পরিবেশ আর বিশোষক লাইমস্টোনের কারণেই মৃতদেহগুলো পচে না গিয়ে শুকিয়ে যেত। প্রাথমিক এই অবস্থার পর মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কিছু বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা শুরু হয়। এই প্রাচীন প্রথা এখন পর্যটকদের জন্য বিস্ময়কর আকর্ষণের ব্যাপার।

✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
সাময়িকীর অতিথি লেখক একাউন্ট। ইমেইল মাধ্যমে প্রাপ্ত লেখাসমূহ অতিথি লেখক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!