অন্যরকম বৈশাখ

অতিথি লেখক
অতিথি লেখক
4 মিনিটে পড়ুন

আবুল কালাম আজাদ

রিমি আর ঝিমি। ওরা দুই বোন। রিমি বড়। ঝিমি ছোট। রিমি ক্লাস সিক্সে আর ঝিমি ক্লাস থ্রিতে।

এবার পহেলা বৈশাখের আগে রিমি আর ঝিমি কিছুটা মনমরা ছিল। সরকার বলে দিয়েছে, ঘরে বসেই বৈশাখ পালন করতে হবে। কারণ করোনা নামের এক প্রাণঘাতী ভাইরাস বিশ^জুড়ে নির্মম তাণ্ডব শুরু করে দিয়েছে। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে এখনো কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষেধক আবিষ্কার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ভরসা।

বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারো সঙ্গে হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি করা যাবে না। কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে হবে।

সাবধানতার জন্যই সরকারি আদেশ মানতে হবে। সরকার জনগণকে রক্ষার জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত সবাই জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, সাংবাদিক তারাও মানুষকে সচেতন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

তারপরও পহেলা বৈশাখ ঘরে বসে পালন করার কথা ভাবলে একটু মন খারাপ তো হয়ই। প্রতি বছর কত ঘোরাঘুরি করা হয়। এটা-ওটা কেনা হয়। বৈশাখী অনুষ্ঠান উপভোগ করা হয়। গত বছর ঝিমি এক অনুষ্ঠানে নাচতে গিয়ে শাড়ির আঁচলে পা আটকে ধপাস করে পড়ে গিয়েছিল। ওর সে কি কান্না!

পহেলা বৈশাখের আগের রাতে আম্মু বললেন : তাড়াতাড়ি ঘুমোও। কাল খুব ভোরে উঠতে হবে।

রিমি আর ঝিমি বড় চোখ করে তাকালো আম্মুর মুখে।

রিমি বলল : ভোরে উঠতে হবে কেন আম্মু? রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানে যাব নাকি?

: উঠতে বলেছি উঠবে। এত প্রশ্ন কেন?

: আম্মু, তুমিই তো বলেছো, যারা বুদ্ধিমান তারা প্রশ্ন করে। বোকারা প্রশ্ন করতে পারে না।

আম্মু চুপসে গেলেন। বললেন : কাল বৈশাখী অনুষ্ঠান করতে হবে।

: বৈশাখী অনুষ্ঠান!

: হ্যাঁ। বাইরে যাওয়া বন্ধ বলে কি বৈশাখী অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে? বৈশাখ হলো বাঙালির প্রাণের উৎসব। আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে বৈশাখ। আমরা না হয় এবার একটু অন্যরকমভাবেই বৈশাখকে বরণ করব।

ভোরে উঠে রিমি-ঝিমি অবাক! আম্মু বৈশাখী শাড়ি পরে বৈশাখী সাজে সেজেছেন। বাবা পরেছেন বৈশাখী পায়জামা-পাঞ্জাবি। চাচ্চুও তাই। নিচের ফ্ল্যাটেই থাকেন রিমি-ঝিমির বড় ফুপি। ওদের দুটি ফুপাতো বোন আছে। বড়টা রুমু। রিমির চেয়ে এক ক্লাস নিচে পড়ে। ছোটটা ঝুমু। ঝিমির চেয়ে এক ক্লাস নিচে পড়ে। তারা সবাই বৈশাখী সাজে এসে পড়েছে। ছোট ফুপি-ফুপা আর তাদের পুচ্চি ছেলে কঙ্কন তো আগে থেকেই ওদের বাসায় আছে।

বড় ড্রইং রুমে মাদুর বিছিয়ে সবাই বসল। বাবা হারমোনিয়াম টেনে নিলেন। চাচ্চু ধরলেন তবলা। ছোট ফুপা দরাজ কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন : এসো হে বৈশাখ এসো এসো…।

তার সঙ্গে সবাই কণ্ঠ মেলালো। তারপর একের পর এক গান। গানের ফাঁকে বড় ফুপা কবিতা আবৃত্তি করলেন। ছোট ফুপিও একটা কবিতা আবৃত্তি করলেন। ঝিনি একটা নাচ করল। ঝুমুও একটা নাচ করল।

ঝুমুর নাচ শেষে প্রচুর হাত তালি দিতে হলো। হাত তালি না দিলে ও খুব মাইন্ড করে।

দুপুরে খেতে গিয়ে ওরা দেখে দাদু একশত ভাগ বাঙালি খাবার রান্না করে রেখেছেন। পান্তা ভাত, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ। নানা পদের ভর্তা। আর ইলিশ মাছ ভাজা।

সবার দেখাদেখি ছোট ফুপির পুচ্চি ছেলে কঙ্কন একটা কাঁচা মরিচে কামড় দিয়ে ‘পানি পানি’ চিৎকারে ছাদ কাঁপিয়ে ফেলল। ওর ঠোঁট লাল হয়ে গেল। জিহ্বা দিয়ে লালা ঝরতে লাগল। বাবা বললেন : যে কর্ম নাহি পারো, সে কর্ম কেন করো?

যা হোক, সারাদিন ভীষণ আনন্দে কেটে গেল। বড় ফুপা বললেন : আনন্দ করার ইচ্ছা থাকলে আনন্দ আটকে থাকে না।

✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
সাময়িকীর অতিথি লেখক একাউন্ট। ইমেইল মাধ্যমে প্রাপ্ত লেখাসমূহ অতিথি লেখক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!