শান্তাকর্ষণ

ফয়সাল কবির
ফয়সাল কবির - ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
15 মিনিটে পড়ুন
আবু রাশেদ পলাশ
সাময়িকী.কম

Polash%2521%2521 শান্তাকর্ষণ
আবু রাশেদ পলাশ
দি নিরাময় মানসিক হাসপাতাল থেকে ফেরার পর নিজের মধ্যে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করে জহির সাহেব । এই যেমন মরা মানুষের গন্ধ । আজকাল প্রায়ই নিজের দেহে মরা মানুষের গন্ধ পায় সে । সুগন্ধি ব্যবহার করলে গন্ধটা আরও প্রকট হয়ে নাকে লাগে তার । মুহূর্তে জ্বালা ধরে মস্তিষ্কে । দেহের চামড়ায় পচন ধরেছে কি, নাকি পচন সেখানে দেহের ভেতর যেখানে অন্যকোন অস্তিত্বের বাস।

দীনেশ চক্রবর্তী জহির সাহেবের পুরনো বন্ধু । সেদিন তার সাথেই দি নিরাময় মানসিক হাসপাতালে গেছিল সে । সেখানে শান্তাকর্ষণ থাকে । শান্তাকর্ষণের কথা মনে আছে ? সায়েন্স ক্লাবের শান্তাকর্ষণ,লম্বা টিংটিঙে মেয়েটা- এখন বড্ড উন্মাদ সে ।কাওকে চিনতে পারেনা আর । চিনতে পারেনি তাকেও । সেখান থেকে ফিরেই নিজের মধ্যে ঐ পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করে জহর সাহেব । আজকাল আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে খুব অচেনা ঠেকে তার । নিজের দেহ অবয়বকেও ঠাহর করতে পারেনা সহসা । প্রথমে দর্শন ত্রুটি মনে হয়েছিল এটা  । পরে দেখা গেল ব্যাপারটা শুধু তার ক্ষেত্রেই, অন্য সবই স্পষ্ট । তাহলে কি দিনে দিনে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে জহির সাহেব ?
জহির সাহেব এবার দেশে এসেছে অনেক বছর পর । সচরাচর আসা হয়না তার । কারণ হতে পারে-দেশে নিজের বলে তেমন কেউ নেই । অন্যদিকে পালিয়ে বেড়ানোর স্বভাব তার । দীনেশ সাহেবের গুছানো পরিবার দেখলে মায়া হয় এখন । মাঝেমাঝে সংসার ধর্মে লোভ হয়, পরক্ষণে  বকধার্মিক মনে হয় নিজেকে । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নিজের সত্তাকে খুঁজে ফিরে জহির সাহেব।
বাঁশখালি গ্রামে মিয়া বাড়িটা কৈলাস নদীর তীর ঘেঁষে । বাহারুদ্দিন মিয়া এ গাঁয়ের মোড়ল । এটা ময়নাদের বাড়ি । ময়না এবার বারোতে পা দিল। প্রাইমারি স্কুল শেষ হয়েছে এবার । মা হীন স্নেহবৎসল এ শিশুটি দাদির মমতায় বড় হয়েছে আজ অবধি । বিকেলে নদীতীরে প্রকাণ্ড বটগাছটার নিচে বসে থাকলে পুরনো ভাবনা এসে ভিড় করে নিজের মধ্যে । স্কুলের প্রথম দিনটির কথা মনে হয় । নিতেন স্যার ক্লাস নিতে এসে নাম জিজ্ঞেস করেছিল তার-
-নতুন আসছ, নাম কি কওতো ?
-জহিরুল্লাহ । ভয়ে ভয়ে জবাব দিয়েছিল ময়না । পাশে থেকে একজন বলেছিল
-মিছা কতা স্যার । হের নাম ময়না ।
সেদিন ক্লাসে হাসির হিড়িক পড়েছিল তাকে নিয়ে । ছেলে মানুষের নাম ময়না হয় নাকি ? বাড়ি এসে দাদির সাথে কলহ করেছিল সে । একই পাড়ার হারু,সবুজ আর জয়নালের সাথে সখ্যতা ময়নার । ওদের সাথে পাড়া ঘুরতে ভাল লাগে তার ।চৈত্র-বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয় বাঁশখালি । ফলসমেত আম গাছগুলো তাণ্ডব নৃত্য করে ঝড়ে । গাঁয়ের ছেলেদের মধ্যে আম কুড়ানোর ধুম পরে পাড়ায় পাড়ায় । ময়না যেতে চাইলে দাদি হাঁক দেয়-
-তুফানরে ডরাইস দাদা, যাসনে অহন ।
দাদির কথায় কর্ণপাত করেনা ময়না । শ্রাবণ মাসে বন্যা হয় গ্রামে । পানিবন্ধি দিন কাটায় এখানকার সবাই । ময়নাদের সে চিন্তা নেই, ওরা বরং যৌবনমতি এখানে । বড় ঘরের দেউড়ির পাশ থেকে জয়নালের কণ্ঠ শুনলে জবাব দেয় ময়না ।
-জয়নালনি অন্দরে আয় ।
-ময়না ল যাই ।
-কই ?
– সবুজেরা ভেলা বানাবো কয়, ল আমরাও বানাই ।
-হ নিযজস । দাদি ধমক দিলে পাল্টা জবাব দেয় ময়না । ‘ও বুড়ি চেত ক্যান, মুখে প্যাঁক দিমু কইলাম’    
দিনগুলো হয়তো এমনই যেতে পারত ময়নার । গ্রামের স্কুলে মেট্রিক দিয়ে শহরে আসতে হয় তাকে । সুধারামপুর কলেজে ভর্তি হয় সে । বাহারুদ্দিন কড়া মেজাজি । তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেনা ময়না । ও যেদিন শহরে আসে ভয়ে ভয়ে একটি কথা বলেছিল বাবাকে ।
-এখানে থাকুমনা আমি, নিয়া যাও লগে ।
কথা ফলপ্রসূ হয়নি বাহারুদ্দিনের কাছে । ফলশ্রুতিতে এখানেই থাকতে হয় ময়নার । শহরে নতুন পরিবেশে এসে ঘোর পরিবর্তন ঘটে ওর জীবনে । জীবনকে উপলব্ধি করতে শিখে সে । নিজের নামটাও হারিয়ে ফেলে একসময় । এখানে লজিং থাকার বিনিময়ে গেরস্তের দুই ছেলেকে পড়াতে হয় তার । বিকেলে কৈলাস নদীর তীর ধরে হাটে সে । শান্ত জলে নিজের দেহ অবয়ব দেখলে কথা বলে ওর সাথে ।
জহির এখন যেখানে থাকে সেখান থেকে স্থানীয় মোড়লের বাড়িটা বেশি দূরে নয় । হিন্দু বাড়ি । নিজের ঘরে জানালা ধরে দাঁড়ালে ও বাড়ির বারান্দা দেখা যায় । একদিন জহির সেখানে এক কিশোরীর অস্তিত্ব আবিষ্কার করে । ওর নাম অরু । মণ্ডলের মেয়ে, সুধারামপুর কলেজে ভর্তি হয়েছে এবার । জহিরের সাথে মাঝেমাঝে চোখাচোখি হয় অরুর । কথা হয়না সহসা । সুধারামপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে মণ্ডলের বাড়িটা পাশ কাটিয়ে আসতে হয় জহিরকে । চোখাচোখি হলে অরুই ডেকে পরিচিত হয় ওর সাথে ।
-শুনছো, তোমাকে বলছি ।
-কিছু বলবেন কি ?
-হুম, তুমিকি এখানে থাক, নাম কি তোমার ?
-জহিরুল্লাহ । লজিং থাকি এ পাড়ায় ।
সেদিন অরুর নাম জানা হয়না জহিরের । জিজ্ঞেস করার সাহস পায়না সে । কলেজে প্রথম দিন ক্লাস করতে যেয়ে দিনেশের সাথে বন্ধুত্ব হয় তার । বিকেলে একসাথে বাড়ি ফিরে ওরা । দিনেশের সংস্পর্শে এসে একাকীত্বগুলো দূর হয় জহিরের । এরপর একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে একটা মেয়েলি কণ্ঠ শুনে চমকে উঠে সে । পেছন ফিরে দেখে অরু । অরুযে তার সাথেই পড়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে কদিন আগেই । ইতোমধ্যে নামটাও জেনে গেছে সে । অরু বলে-
-বাড়ি যাবা ? চল একসাথে যায় ।
অরুর কথায় কেমন ইতস্ততবোধ করে জহির । কোন মেয়ে মানুষের পাশে হাটার অভ্যাস নেই তার । আগে কখনো হাঁটেনি কারো সাথে । গ্রামে এটা ভালভাবে দেখেনা কেউ, হয়তো শহরেও । মুহূর্তে দুটানা তৈরি হয় নিজের মধ্যে । সাথে দীনেশ আছে । ও সাথে থাকলে ভরসা পায় জহির । পরক্ষনে জবাব দেয়-
-হুম, চল যাই ।
চলতি পথে অরুদের ব্যাপারে অনেককিছু জানা হয় জহিরের । অরুর দাদা একজন ভারতে থাকে । দেশের পরিস্থিতি ভাল হলে ওরাও হয়তো চলে যাবে পাকাপোক্তভাবে । এরপর মাঝেমাঝেই একসাথে আসা যাওয়া করে তারা । ফলে দিনে দিনে সখ্যতা তৈরি হয় দুজনের মধ্যে । অরু দেখতে বেশ, পড়াশোনাতেও । পাঠ্যপুস্তকের কঠিন বিষয়গুলো অরুর সহযোগিতায় বুঝে নিতে পারে জহির । একটা সময় এসে শহরকেন্দ্রিক জীবনকে একেবারে আপন মনে হয় তার ।
কলেজ জীবনে অরু আর দীনেশ ছাড়া আরও কিছু ভাল বন্ধু পায় জহির । প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষায় ওদের ক্লাসে প্রথম হয় শান্ত । অরু দ্বিতীয় । এটা নিয়ে মন খারাপ হয় অরুর । ও বরাবরই পড়াপাগল । জীবনে এই প্রথম অরুকে মন খারাপ করতে দেখে জহির । অরুকে শান্তনা দেয় সে ।
-মন খারাপ করোনা অরু । সামনে আরও ভাল করবা নিশ্চয় ।
 সুধারামপুর কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় রশিদ স্যার । অরুদের কলেজে বিজ্ঞান পড়ান তিনি । সেদিন ক্লাস নিতে এসে একটি ঘোষণা দিলেন রশিদ স্যার ।
-কলেজ ক্যাম্পাসে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সায়েন্স ক্লাব করা হবে । কাজ শুরু কর সবাই ।
রশিদ স্যারের ঘোষণার পর একটা হৈ হৈ রব উঠে সবার মধ্যে । কলেজ পড়ুয়া অতিউৎসাহী ছেলেমেয়েরা পাড়া ঘুরে চাঁদা তুলে । তারপর কয়েকদিনের মধ্যে একটা দুচালা ঘর হয় কলেজ ক্যাম্পাসে । নাম হয় সায়েন্স ক্লাব । কলেজ পড়ুয়া বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এর সদস্য । এখানে বিজ্ঞানের চর্চা হয় । দক্ষতার পরীক্ষা হয় মাঝেমাঝেই । এখানেও এগিয়ে থাকে শান্ত । অরুর সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় তার । দিনের পর দিন অরুর চেষ্টা থাকে অপ্রতুল । মাঝেমাঝে অরুর একগুঁয়েমি দেখে বিরক্ত হয় জহির । ও বলে-
-কেন শান্তর পেছনে পড়ে থাক বলত ? তুমিতো ভালোই কর, ছেড়ে দাওনা ওর কথা ।
খোঁচা দেয় সেঁজুতি-বুঝনায় এখনো । এটা হল শান্তাকর্ষণ । মহাকর্ষ,অভিকর্ষ তারপর শান্তাকর্ষণ 
-শান্তাকর্ষণ ? বাহ! বেশ ভাল বলছোতো ।
পরদিন সবার মুখে মুখে নামটা ছড়িয়ে যায় । একসময় অরু নামটায় মুছে যায় সবার কাছ থেকে । কলেজে শান্তাকর্ষণ নামে পরিচিতি পায় অরু 
ঘটনা প্রবাহ একাত্তর । আজকাল অরুর কথাগুলো খুব বেশি অপরিচিত মনে হয় জহিরের । মাঝেমাঝেই উঁচুগলায় কথা বলে সে । আর কি সব কথা বলে মাথামুণ্ডু বুঝতে পারেনা কেউ । দেশের পরিস্থিতিযে স্বাভাবিক নয় এটা জানে সবাই । ঢাকায় প্রতিদিন মিটিং মিছিল হয় । রাজনীতির গরম হাওয়া সহসা মফস্বল শহরের মানুষগুলোর গায়ে লাগেনা । বিকেলে সায়েন্স ক্লাবে আড্ডা দেয় সবাই । অরু বলে-
-দেখো শীঘ্রই দেশে বড় কিছু হবে ।
শান্ত বলে-কিছুই হবেনা । দুএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে ঠিক হয়ে যাবে সব ।
সবার মধ্যে হঠাৎ রেগে যায় আমজাদ-কি সব ব্যাপার নিয়ে পড়ে আছ তোমরা । আমাদের কি, আমরাতো ভাল আছি তাইনা ?
প্রতিবাদ করে সেঁজুতি । প্রতিবাদ করে সুনির্মল,সুধাংশু,নবীন,রোকেয়া সহ অনেকেই ।ধীরে ধীরে সায়েন্স ক্লাবে দেশীও প্রেক্ষাপটটা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়ায় । সাত মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দান বেশ আলোচনা তৈরি করে সবার মধ্যে । অরুদের বাসায় পত্রিকা রাখা হয় নিয়মিত । ক্লাবে বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে সে । আর সবার থেকে কেন যেন তার আগ্রহটায় বেশি । একসময় হাঁক দেয় অরু-
-তোমরা বসে আছ যে ?
-কি করব তাহলে ? জবাব দেয় দীনেশ ।
-কি করবা মানে, প্রস্তুত হও সবাই ।
-কিভাবে, কি আছে আমাদের ?
-মনোবল । আমরা কিন্তু কয়েক কোটি, জয় আমাদেরই হবে ।
এর কয়েকদিন পর অরুর সহযোগিতায় মুক্তিকামী মানুষদের নিয়ে সুধারামপুর মুক্তি কমিটি গঠিত হয় । ওরা প্রচারণা চালায় বিভিন্ন গ্রামে । এ দিন গুলোতে খুব ব্যস্ত সময় পার করে অরু । ব্যস্ত থাকে জহিরও । ইচ্ছে করলেও নিজের মত করে অরুর সাথে কথা বলতে পারেনা সে । ভিতরটা কেমন আঁকুপাঁকু করে তার । শূন্যতা তৈরি হয় নিজের মধ্যে । এরপর একদিন পালিয়ে আমজাদ,দীনেশ,নবীন,সুধাংশু ওদের সাথে ভারতে চলে যায় সে । যাওয়ার দুদিন আগে অরুর সাথে কথা হয় জহিরের । অরু বলে-
-ফিরে এসো অপেক্ষা করবো আমি ।
-হুম, বেঁচে না থাকলে মাফ দিও আমাকে ।
-অমন করে বলোনা,বীরের মৃত্যু হয় নাকি ?
এরপর দেশে ফিরে যুদ্ধে যোগ দেয় সবাই । মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটটা হয়তো মর্মান্তিক, কিন্তু অহংকার করার মত । এখানে বিজয়ের কেতন আছে ।
জহিরদের মধ্যে নবীন বিবাহিত । বউ পাগল নবীনকে দেখলে অরুর কথা মনে হয় জহিরের । কে জানে, এখন কেমন আছে অরু । নবীনের বুক পকেটে ওর বউয়ের একটা চিঠি রাখা থাকে সবসময় । অবসরে ওটা পড়ে সে- একবার,দুবার,সহস্রবার । সহযোদ্ধাদের পড়ে শুনায় । বউয়ের গল্প করে সবার সাথে ।
-জানো, আমার বউয়ের সেলায়ের হাত ভাল । এই চাদরটা ওর করা । দীনুদা ঐ গানটার কথা মনে আছে, ঐ যে ঐ গানটা । কি মিহি গলা আমার বউয়ের আমাকে প্রায়ই শুনাই সে ।
নিলু কমান্ডার ধমক দেয় নবীনকে- নবীন থাম ভাই । আমরা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে, প্রেমক্ষেত্রে নয় ।
পরক্ষনে নবীন লজ্জা পায় । লজ্জা পেলে ওর চোখের পাতা পড়ে ঘন ঘন । তারপর উঠে এসে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে সে- ও নিলুদা, গোসসানি অয় তোমার ? বিড়ি খাবা, একখান দেই ?
যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে অরুকে খোঁজে পায়নি কেউ । ওদের বাসায় গিয়ে ওদের চাকর রামনাথকে পেয়েছিল জহির । তাকে দেখে সেদিন হাউমাউ করে কেঁদেছিল লোকটা । 
-আইলেন বাজান, এতদিন পরে যে ? হগলরে গাঙের জলে ভাসান দিছিগো ।
-কি হয়েছিল কাকা বলেনতো, অরু কোথায় ?
-নিরুদ্দেশগো বাজান নিরুদ্দেশ । তুইলে নিয়ে গেছিল রাজাকারে পায়নাই আর ।
অরু বীরাঙ্গনা । যুদ্ধের পর দীর্ঘদিন একটা খ্রিষ্টান মিশনারিতে ছিল সে । অবশেষে একদিন খুঁজে পেয়ে দীনেশ ওকে নিয়ে এসেছে এখানে । আজন্ম উন্মাদিনী । জানো, পৃথিবীর সব মহৎ কাজের প্রেরণা ওরা । ওদের চোখে আগুণ থাকে । জাহান্নামী শিখা,যে পুড়ে সে সত্যিই পুড়ে ।
ছোটবেলার কৈলাস নদী শুঁকিয়ে গেছে এখন । জহির সাহেবের বাড়িটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে অনেকদিন আগে । তখন নদিতে যৌবন ছিল, এখন ওর উত্তাল খরা জহির সাহেবের মত । ছোটবেলার ময়না বড়বেলার জহির সাহেবের কাছে টিকতে পারেনি আর । দাদি বেঁচে থাকলে হয়তো ময়না বলে ডাকতো তাকে । আজকাল ময়না ডাকটা শুনার জন্য ভেতরটা কেমন হাহাকার করে  জহির সাহেবের । একদিন বিকেলে কৈলাস নদীর তীর ধরে হাঁটে সে । অল্প পানিতে নিজের দেহ অবয়ব দেখলে সামনে এসে দাঁড়ায় আমজাদ,সুনির্মল,দীনেশ,রোকেয়া,সেঁজুতি,জয়নাল,সবুজ সহ সবাই । জীবনের হাঁটে সওদা করে অনেকেই গত এখন । আজকাল নবীনের কথাও মনে পড়ে খুব । বউ পাগল নবীন একাত্তরে শহীদ হয়েছে সে । মরার আগে একটা চিঠি দিয়েছিল জহির সাহেবকে ওর বউকে দেওয়ার জন্য । আজও চিঠিটা পৌঁছানো হয়নি তার । কোথায় আছে ওর বউ ?
শেষ জীবনে অরুকে এভাবে দেখবে ভাবেনি জহির সাহেব । সেদিন ওর সামনে দাঁড়িয়ে একটাও কথা বলতে পারেনি সে । হৃদয়পোড়া আর্তনাদ শুনেছে শুধু । সত্যিযে এখনো অপ্রকাশিত । মাঝেমাঝে মনে হয় আকাশের দিকে মুখ করে ও সত্যি শূন্যে ভাসিয়ে দেওয়া হোক । ভাসতে ভাসতে ও যদি পুণ্যের সন্ধান পায়, মীমাংসা উন্মাদিনীর কাছেই থাকুক । সব সত্যি প্রকাশ করতে হবে কেন, কিছু সত্যি বুঝে নিতে হয়।     

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: ফয়সাল কবির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
অনুসরণ করুন:
কর্মজীবী এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!